দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরও ৫১ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকি ২৫ জন আওয়ামী লীগসহ ১৩টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী।
সোমবার নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানির দ্বিতীয় দিনে তাদের আবেদন মঞ্জুর করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এদিন সিলেট-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান এবং রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া (মাহিয়া মাহি) তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
গত দুদিনে সবমিলিয়ে ১০৭ জন প্রার্থিতা ফিরে পেলেন। এই ১০৭ জনের মধ্যে ৫৯ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের হলরুমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার কমিশনার আপিল শুনানি করেন। এদিন ৯৯টি আপিল শুনানির জন্য রাখা হয়। এর মধ্যে একটি আসনের আপিলকারী শুনানিতে অংশ নিতে আসেননি। ৬টি আপিল শুনানি হলেও আদেশ স্থগিত রাখা হয়। আর ৪১টি আপিল আবেদন মঞ্জুর করেনি ইসি। বাকি ৫১টি আপিল মঞ্জুর করা হয়। অর্থাৎ তারা সবাই প্রার্থিতা ফিরে চেয়ে আপিল করলে কমিশন তা মঞ্জুর করেছে।
যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায় এবং ময়মনসিংহ-৮ আসনের ফখরুল ইমাম প্রতিপক্ষ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেন। ওই আপিলের ওপর শুনানির জন্য সোমবার নির্ধারিত ছিল। আরও কিছু আপিল থাকায় এ দুটির ওপর আগামী ১৩ ডিসেম্বর শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার একশ’ আপিলের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া বেশিরভাগ প্রার্থীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। অনেকের কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচন কমিশন প্রাঙ্গণে উৎসব করতে দেখা যায়।
আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান বলেন, আমার প্রার্থিতার জন্য নির্বাচনী এলাকার সব দলমতের মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। আমার প্রার্থিতা বাতিল করায় তারা অত্যন্ত ব্যথিত ছিলেন। আজকে আপিল মঞ্জুরে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তো রয়েছেই। সরকার বলেছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ব্যবস্থা করবে। নির্বাচন কমিশনও জাতিকে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তবে আমরা যদি দেখি এই প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় ঘটছে তাহলে আবার আমরা জনগণের সামনে হাজির হবো।
গণফোরামের একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, সেটা টেকনিক্যাল বিষয় ছিল। শুনানিতে আমাদের দলের সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আমরা সবাই নির্বাচনের পক্ষে।
শুনানিতে আওয়ামী লীগের নোয়াখালী-৩ আসনের প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরন তার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এদিন জাতীয় পার্টির বাগেরহাট-২ আসনের প্রার্থী হাজরা সহিদুল ইসলাম, ঝালকাঠী-২ আসনের মো. নাসির উদ্দিন, চাঁদপুর-৪ আসনের সাজ্জাদ রশিদ, নাটোর-৩ আসনের মো. আনিসুর রহমানও প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছেন- সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিক ও ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী নুরুল আমিন; তৃণমূল বিএনপির ঢাকা-১৪ আসনের মো. নাজমুল ইসলাম, রাজবাড়ী-২ আসনের এসএম ফজলুল হক, বাগেরহাট-২ মরিয়ম সুলতানা ও সিরাজগঞ্জ-২ মো. সোহেল রানা এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ঢাকা-১৯ আসনের প্রার্থী মো. জুলহাস।
আরও রয়েছেন- বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) ঢাকা-১২ আসনের মো. আতিকুর রহমান নাজিম ও জামালপুর-৪ আসনের তারিখ মাহদী; গণতন্ত্রী পার্টির নোয়াখালী-৪ আসনের সারওয়ার ই দীন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ঢাকা-১০ আসনের কেএম শামসুল আলম, জাকের পার্টির খুলনা-১ আসনের মো. আজিজুর রহমান, বিএনএম’র গাইবান্ধা-১ আসনের মো. মোস্তফা মহসিন, মুক্তিজোটের কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের মোহাম্মদ আইয়ুব হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ’র গাইবান্ধা-৩ আসনের এসএম খাদেমুল ইসলাম খুদি ও মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, কুমিল্লা-৫ আসনের আলীমুল ইহছান এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের কুমিল্লা-৮ আসনের মো. হান্নান মিয়া।
যেসব স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তারা হলেন- চট্টগ্রাম-১০ আসনের ফরিদ মাহমুদ; ময়মনসিংহ-১১ মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ; কুষ্টিয়া-৪ আবদুর রউফ; রংপুর-২ আসনের মোছা. সুমনা আক্তার; গাইবান্ধা-২ মোছা. মাছুমা আখতার; কুমিল্লা-২ মো. আবদুল মজিদ; নোয়াখালী-১ খন্দকার আল আমিন; ঢাকা-৬ আসনের ফারহানা সাঈদ; বাগেরহাট-২ এসএম আজমল; বাগেরহাট-৪ মো. জামিল হোসেন; রাজবাড়ী-১ মো. ইমদাদুল হক বিশ্বাস; মুন্সীগঞ্জ-১ গোলাম সরোয়ার কবীর; সুনামগঞ্জ-৪ মো. মোবারক হোসেন; ঢাকা-৩ আসনে মো. আলী রেজা; কুষ্টিয়া-১ মো. নাজমুল হুদা; জামালপুর-২ শাজাহান আলী মন্ডল; খুলনা-৪ মো. রেজভী মিয়া; খুলনা-৬ জিএম মাহবুবুল আলম; চট্টগ্রাম-৬ শফিউল আজম; কুষ্টিয়া-২ ডা. ইফতেখার মাহমুদ; নীলফামারী-৪ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর আলম; কিশোরগঞ্জ-৩ মো. গোলাম কবির ভূঞা; গাজীপুর-৫ মো. আমজাদ হোসেন; নাটোর-৪ সুজন আহমেদ এবং রাজশাহী-৪ আসনের মো. বাবুল হোসেন।