চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের সময় ভুয়া ভোটার শনাক্ত হওয়ায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেছেন রাজশাহী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
তিনি জানান, দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নিজের আসনের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হয়। কিন্তু জালিয়াতির (ভুয়া স্বাক্ষর) অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১২৭ জন। সেই হিসেবে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ৪ হাজার ৮৩ জন সমর্থনকারী স্বাক্ষর জমা দেন। এর মধ্য থেকে ১০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে ৩ জনের তথ্যে হেরফের পাওয়া গেছে। তার জমা দেওয়া এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের মধ্যে তিনজন ভোটারের নমুনা পাওয়া যায়নি। আর এক জন ভোটার না। ললিতা মান্ডি নামে একজন নারী রয়েছেন যিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোলের ভোটার। তিনি তানোরের ভোটার না। এজন্য মাহির মনোনয়নপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এদিকে গত শনিবার (২ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাহি লিখেছেন, ‘যেটা খবর পেলাম সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে আপনার কপালে খারাপ আছে বলে দিলাম যুদ্ধ ঘোষণা হবে কালকে। ’ তবে তিনি এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন তিনি আপিল করবেন।
এর আগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন মাহিয়া মাহি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র বললেই মনে কষ্ট লাগে। কারণ আমি মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শকে লালন করি। প্রধানমন্ত্রীর নৌকাকে নিজের নৌকা মনে করি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো এলাকায় যেন কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হন। এ জায়গা থেকেই আমি রাজশাহীর তানোর-গোদাগাড়ী আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী আছেন তিনি অনেকটাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন। তাই প্রথম থেকে নির্বাচন করতে চাই। ’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। এজন্য মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন রাজশাহী-১ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের জন্য। তবে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড তাকে বিবেচনায় নেয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার পরও সেখানে নির্বাচন না করে রাজশাহীতে করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহিয়া মাহি বলেন, সেখানে অনেক প্রার্থী। তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই রাজশাহীর এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বলেও উল্লেখ করেন চলচ্চিত্র নায়িকা মাহি।
এর আগে গত সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে মাহিয়া মাহির পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তার এক নিকট আত্মীয়। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তার নানাবাড়ির এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন।
তার বাবার বাড়ি পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় হলেও রাজশাহীর তানোর উপজেলায় তার জন্ম। আর ছোট থেকে এখানেই তার বেড়ে ওঠা।
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। রাজশাহী-১ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। ২০০৮ সাল থেকেই তিনি এ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি সরকারের সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী।