দেশ-বিদেশে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ ৷ এর জন্য জোটবদ্ধ নির্বাচন বা নির্বাচনে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আসন সমঝোতার গুরুত্ব কমে এসেছে দলটির কাছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে বিশেষ করে জোটের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা কীভাবে হবে সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করেনি দলটি।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, মাঠের অবস্থাসহ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে জোটের এবং জোটের বাইরের সহযোগীদের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। সেক্ষত্রে নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে জোটসঙ্গী ও সহযোগী দলগুলোর নেতাদের।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রতীক চেয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে দলের প্রধানের চিঠির ভিত্তিতে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।
যে সব আসনে জোটসঙ্গী দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হবে সে সব আসনে ওই দলগুলোর প্রার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হবে। জোটসঙ্গী দলগুলোর মধ্যে যারা নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবেন তাদেরকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়া হবে। তবে নৌকা ছাড়াও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করা কিছু দলের সঙ্গেও সমঝোতার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই দলগুলোকেও আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। তবে সেখানে তুলনামূলভাবে আওয়ামী লীগের দুর্বল প্রার্থী থাকবে। সেভাবেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রগুলো জানায়।
আবার আওয়ামী লীগ ও জোট শরিকদের যারা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবেন সে সব আসনে নৌকার বিপরীতে অন্য কোনো দলের প্রার্থী না থাকলে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী যাতে থাকে সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সেভাবেই ৩০০ আসনে আাওয়ামী লীগ থেকে ৪০০ বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের আগ্রহী প্রার্থীদের সঙ্গে মত নিবিময়ের সময় এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। কেউ যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হতে না পারে এবং নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয় সে বিষয়টি চিন্তা করেই এ কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।
তবে আওয়ামী লীগের এই কৌশল নিয়ে জোটসঙ্গীদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাদের আশঙ্কার কারণ আওয়ামী লীগ থেকে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হওয়া অনিশ্চিত বলে তারা মনে করেন। এর পেছনে রয়েছে ওই সব দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা। জোট শরিকরা নৌকা প্রতীক পেলেও সেখানে আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অধিকাংশই তার পক্ষে চলে যাওয়ার সম্ভাবনার বেশি। এতে জোট শরিকদের বিজয় অনিশ্চিতই হয়ে পড়বে।
১৪ দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ১৫ মার্চ ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোটের সভা করেন। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় আগামী নির্বাচনেও জোটগতভাবে অংশ নেবে ১৪ দল ৷ সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে থাকে জোট শরিকরা ৷ এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নতুন অবস্থানের ফলে অস্বস্তিতে পড়েছে ১৪ দলের নেতারা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। জোটকে এখন আর গুরত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে তারা মনে করেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের নীতিনির্বারণী পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য ও পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে বলে তারা জানান। তবে ১৪ দলের নেতাদের হতাশা ও ক্ষোভের বিষয়টি আওয়ামী লীগও অবগত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনার্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা জানান, এ বিষয়টি নিয়ে জোটের দলগুলোর নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি ও কিছুটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বিশেষ করে গত তিনটি নির্বাচনে জোটসঙ্গী যে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন। এ বিষয়টি আওয়ামী লীগ জানে । ওই নেতারাও এ অস্বস্তির বিষয়টি আওয়ামী লীগকে জানিয়েছেন ৷ কিন্তু তারপরও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখানোর বিষয়টিই এখন আওয়ামী লীগের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গত নির্বাচনের পর টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই সরকারের মন্ত্রী সভায় ১৪ দলের কাউকে না রাখায় জোটসঙ্গীদের কেউ কেউ হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন ৷ তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলভুক্ত অন্যান্য দলকে বিরোধী দলের ভূমিকায় যাওয়ার কথা বলেছিলেন ৷ কিন্তু গত ৫ বছরে জোটের এ দলগুলোর মধ্যে সে ধরনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি ৷ নিজেদের দল গোছানো বা সংগঠনিক সক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকর কোনো তৎপরতাও দেখা যায়নি ৷ জোটের উপর নির্ভরশীল হয়েই ছিলো ওই দলগুলো। যদিও গত ৫ বছর ১৪ দলীয় জোটও প্রায় নিষ্ক্রিয়ই ছিলো ।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই কথায় রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিলো ৷ তিনি যখন যেটা বলেন সেটা সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা করেই বলেন।