বরিশাল-৫ (সদর) আসনের প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগে উত্তাপ ছড়িয়েছে এরই মধ্যে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহিদ ফারুক-এমপিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় বঞ্চিতরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও মো. সালাহউদ্দিন রিপন নামে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এরপর থেকেই প্রার্থী ও অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে কিছুটা উত্তাপ ছড়াচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের হাব খ্যাত এই আসনটিতে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন দিয়েছেন, তাই দলের সব ইউনিটকেই নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। আর যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন তাদের নিজেদের লোক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে কাজ করতে হবে।
তবে এরই মধ্যে মহানগর আ. লীগের শীর্ষ পদধারী নেতা ও কর্মীদের অনেককেই সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। যেমন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, সাইদুর রহমান রিন্টু, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল, সদস্য এস এম জাকির হোসেন, রফিকুল ইসলাম খোকনসহ নেতাকর্মীরা গিয়েছিলেন।
আবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুক-এমপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কেবিএস আহম্মেদ কবির, অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক, বরিশাল জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান হাওলাদার, বরিশাল মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক মো. নিজামুল ইসলাম নিজাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি জোবায়ের আব্দুল্লাহ জিন্নাহসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহে নৌকার ভোটের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেছেন, এটি আমরা বলতে পারবো না, এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা বলতে পারবেন আমরা আমাদের প্রার্থীর কথা বলতে পারবো।
আর দলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি এর উত্তরও দেননি।
মনোনয়ন সংগ্রহের পরের দিনই দেশব্যাপী বিএনপির সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হরতালের প্রতিবাদে উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের ডাক দেয় মহানগর আওয়ামী লীগ। সমাবেশের মঞ্চে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহকে পাশে রেখে সভাপতির বক্তব্যে বরিশাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বরিশাল-৫ (সদর) আসন নিয়ে কথা বলেন মহানগরের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর।
এসময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে কেন এসেছি, আপনাদের প্রশ্ন জাগতে পারে। আমরা তো আওয়ামী লীগের। তাহলে আমরা কেন স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে যাচ্ছি প্রশ্ন উঠতে পারে। উত্তরে বলবো, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ দিয়েছেন জনপ্রিয়তা যাচাই করার জন্য। সেই সুযোগ আমরা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ফসল রোপণ করি আমরা। রোপণ থেকে শুরু করে ফল পাকা পর্যন্ত আমরা পরিশ্রম করে যাই। আর সেই পাকা ফসল আরেকজন এসে কেটে নিয়ে ঘরে তুলবে তা আমরা হতে দেব না। আমাদের কষ্টার্জিত ফসল আমাদের ঘরে রাখতে চাই।
ওই সমাবেশে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল আওয়ামী লীগকে আগলে রেখেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল ৫ আসন থেকে তৃণমূল ভোটে নির্বাচিত হবেন তিনিই। আমরা জেলা ছাত্রলীগ তার জন্য সর্বোচ্চ কাজ করবো।
আর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী নইমুল হোসেন লিটু বলেন, বরিশালে আওয়ামী লীগের নেতা একজনই সেটা হচ্ছে সাদিক আব্দুল্লাহ। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে সাদিক আব্দুল্লাহকে সাধারণ মানুষ বিপুল ভোটে জয়ী করবেন।
তাদের এ বক্তব্যে স্পষ্ট হয় মহানগর আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি। এখন প্রশ্ন উঠেছে প্রার্থী নিয়ে তাহলে কি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরোধ নাকি স্থানীয় দলের ভেতর বিভক্তি।
যদিও মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ও তার পক্ষে নেতাদের অবস্থানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫(সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক-এমপি বলেন, গত সিটি নির্বাচনের সময়ও সমস্যা হয়েছিল, তখনও মহানগর আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে সঠিকভাবে সহায়তা করেনি। কিন্তু আপামর সাধারণ মানুষ যারা আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে, যারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বিশ্বাস করে এবং আস্থা রাখে তারা ঠিকই কাজ করেছে। আর সেজন্যই খোকন সেরনিয়াবাতকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনে আমি নৌকার প্রার্থী, আমি দলের অরিজিনাল প্রার্থী সুতরাং যারা আওয়ামী লীগপন্থী এবং যারা শেখ হাসিনার আস্থায় বিশ্বাস করেন তারা অবশ্যই আমার পাশে থাকবেন।
আর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে থাকবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা-উপজেলা ও মহানগরের যারা রয়েছেন, তারা এরই মধ্যে ফোন দিয়ে বলতে শুরু করেছেন আমরা নৌকায় ভোট দেব, ব্যক্তি কাউকে দেব না। সুতরাং ম্যাসেজ ক্লিয়ার।