ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

জবি থেকেই উপাচার্য চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

লিয়ন সরকার, জবি প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৩০, ২০২৩

জবি থেকেই উপাচার্য চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পঞ্চম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের মৃত্যুর পর উপাচার্যের পদটি শূন্য হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদও গত ২৬ নভেম্বর মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরে চলে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় এখন অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শিক্ষকরা এখানে উপাচার্য হয়ে এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দেড় যুগেও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমসাময়িক সময়ে স্থাপিত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলে এসব কাজ তরান্বিত হবে বলে দাবি তাদের। নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পসহ নানান প্রকল্প চালু থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল উপাচার্যই বাইরে থেকে এসেছেন। তারা অতিথির মতো এসে এখানে চাকরি করে চলে যান। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সেভাবে কাজ করেন না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হলে তাদের জবাবদিহিতার জায়গা থাকবে। তারা কাজ করতে পারবে। এখানে অনেক যোগ্য শিক্ষক আছে। অনেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বও পালন করছে। এবার জবি থেকেই উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানাই।

জবিতে বর্তমানে গ্রেড-১ পদে ৩৬ জন, গ্রেড-২ পদে ৪৬ জন এবং গ্রেড-৩ পদে ৭৪ জন মিলিয়ে সর্বমোট ১৫৬ জন অধ্যাপক আছেন। এর মধ্যে দুজন অধ্যাপককে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে এবং দুজন অধ্যাপককে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন এবং তারা সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও প্রাইভেট বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক বর্তমান দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে নিজ শিক্ষকদেরই যোগ্যতা আছে বলে মনে করেন তারা।

এদিকে দীর্ঘদিন থেকেই জবির অধ্যাপকদের মধ্য থেকে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক নেতারা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অধ্যাপকদের মধ্য থেকেই নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। এই দাবিতে কয়েক দফা শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠিয়ে দিয়েছে জবি শিক্ষক সমিতি।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শতাধিক অধ্যাপক রয়েছেন। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক আছেন ৩০ থেকে ৩৫ জন। আমরা চাই এর মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবার একই চাওয়া। উপাচার্য প্রয়াত হয়েছেন, এটা সরকারের সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই অবগত আছেন। তাদের বিবেচনায় যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ পাবেন।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো লুৎফর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকেই বিবৃতি দিয়ে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ যাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নিয়োগ দেয়া হয় সেই দাবি জানিয়ে আসছি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে তারা ঠিকভাবে কাজ করবে। নিজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে এক্কটা জবাবদিহিতার জায়গা থাকবে। তারা আরও ভালোভাবে কাজ করার চেষ্টা করবে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, প্র‍য়াত উপাচার্য  দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় অনেকদিন কোনো সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। উপাচার্যের মৃত্যুর আগে তা অনলাইনে হওয়ার কথা থাকলেও পরে স্থগিত করা হিয়।  এদিকে প্রতিষ্ঠানটিতে নেই উপ-উপাচার্য পদও। তাই দীর্ঘদিন অভিভাবকহীন হয়ে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কাজ স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থা এড়াতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, ‘উপাচার্য অসুস্থ থাকার সময় থেকেই সিন্ডিকেট সভা হচ্ছে না। তাছাড়া নানা ধরনের প্রশাসনিক কাজও বন্ধ হয়ে আছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না। আমি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে বলেছি উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে যাতে তারা দ্রুত কথা বলে।’

উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে অধ্যাপক ইমদাদুল হকের ক্যান্সার ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসা নিতে গত ১২ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে যান তিনি। পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তিনি ১২ অক্টোবর দেশে ফিরে আসেন। তবে ১১ নভেম্বর (শনিবার) ভোরে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এরপর উপাচার্যের পদটি খালি হয়। ২৬ নভেম্বর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদও মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরে যাওয়ায় বর্তমানে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।