বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের হরতাল এবং অবরোধ কর্মসূচিতে বিপাকে পড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের রোগী। হরতাল-অবরোধ আতঙ্কে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসাকেন্দ্রে ঢাকার বাইরের রোগী কমে গেছে।
চিকিৎসক, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী, রোগীর স্বজন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হরতাল এবং অবরোধে একদিকে যেমন দূরপাল্লার যানবাহনের সংকট রয়েছে, তেমনি আবার যানবাহন পাওয়া গেলেও রয়েছে নানা ভয় এবং আতঙ্ক। ফলে খুব বেশি অসুস্থতা কিংবা জরুরি অবস্থা না হলে রোগীরা ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা করাতে ঢাকায় আসছেন না।
মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কাজ করা রাজবাড়ী জেলার বাসিন্দা মুরাদ নামের একজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ওমানে থাকা অবস্থায় কিছু রোগ ধরা পরলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে অপারেশন করাতে বলেন। কিন্তু সেখানে অপারেশনের ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় তিনি ছুটি নিয়ে দেশে এসেছেন চিকিৎসা করাতে।
মুরাদ বলেন, ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার আমাকে ওষুধ দিয়ে এক মাস পর আবার আসতে বলেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অবরোধে কারণে আমি সময়মতো ডাক্তার দেখাতে ও চিকিৎসা করাতে পারছি না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বহির্বিভাগ-১-এ গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অবরোধ চলাকালীন রোগীর উপস্থিতি অনেক কম। ডাক্তারের চেম্বারের সামনেও স্বাভাবিক সময়ের মতো নাই দীর্ঘ লাইন।
বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ-১-এর দোতলায় পটুয়াখালী থেকে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগীর স্বজন শামিম বলেন, রোগী আমার নানা। তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত। আমরা প্রথমে লঞ্চ তারপর বাসে চড়ে এখানে এসেছি। অবরোধের কারণে আসার সময় ভয় এবং আতঙ্ক ছিল। যাওয়ার সময় কী হয় কে জানে? আমার নিজের জন্য ভয় না হলেও নানা বয়স্ক এবং অসুস্থ। তিনি ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না, তাই ভয় আরও বেশি লাগে।
বহির্বিভাগ-১-এর দোতলায় চিকিৎসারত বিএসএমএমইউয়ের ইন্টারনাল মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. তৌফিক আহমেদ বলেন, অবরোধের কারণে আমাদের ঢাকার ভেতরের রোগী না কমলেও ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীর সংখ্যা কমে গেছে।
স্বাভাবিক সময়ের থেকে অবরোধের কারণে কত সংখ্যক রোগী কমেছে জানতে চাইলে প্রায় ৩০ শতাংশ রোগী কমেছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, হরতাল অবরোধে রোগীর ভোগান্তি অবশ্যই বেড়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে যারা জরুরি চিকিৎসা বা বিভিন্ন অপারেশনের জন্য ঢাকায় আসতো, তাদের একটি বড় অংশ আসতে পারছেন না। এতে রোগীদের ভোগান্তি এবং ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, ঢাকার ভেতরের রোগীদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ঢাকার বাইরে থেকে আসা ইমার্জেন্সি রোগীদেরও তেমন একটা সমস্যা হচ্ছে না, তারা অ্যাম্বুলেন্সে চলে আসছেন। তবে হরতাল অবরোধে কারণে রুটিন রোগী যারা তাদের সমস্যা হচ্ছে, তারা কম আসছেন।
ঢাকার বাইরের রোগীদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকার বাইরের রোগীর ভোগান্তি বেড়েছে। যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন, তারাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসছেন। আমাদের এখানে রোগীর উপস্থিতি আগের চেয়ে কমে গেছে। যাদের চিকিৎসা নেওয়া দরকার ছিল বা ডাক্তার দেখাতে আসার কথা ছিল, তারা আসতে না পারার কারণে তাদের রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, জীবনের ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।