তারেক জিয়া বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র। বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান পরিণতির জন্য যাকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারেক জিয়া ২০০৭ সাল থেকে লন্ডনে পলাতক। বেগম জিয়া অসুস্থ হওয়া বা তার কারাগারে যাওয়া, কোনোটিই তাকে বিচলিত করতে পারেনি। মায়ের টানে সবকিছু উপেক্ষা করে দেশে ফিরতে পারেননি। বরং লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন তিনি। সেখান থেকে কালেভদ্রে মায়ের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, আর দল থেকে তোলা আদায় করছেন। দলে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী প্রত্যাশা করেছিলেন যে, তার মা যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তখন হয়তো তারেক জিয়া সবকিছু উপেক্ষা করে দেশে ফিরবেন। তারেক যদি দেশে ফিরতো তাহলে একটি অন্য রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হত, এটি মনে করেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মীরা। আর এ কারণেই বিএনপিদর পক্ষ থেকে অনেকে বলেছিল যে, তারেক জিয়া দেশে ফিরছেন এবং তিনি দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যে, তারেক জিয়া এখন দেশে ফেরা তো প্রশ্নই ওঠে না, এমনকি তার মায়ের যদি কোন চূড়ান্ত পরিণতি হয় তারপরও তারেক জিয়া দেশে ফিরবেন না বলেই একাধিক ব্যক্তি নিশ্চিত করেছেন। এতে বিএনপির মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, একজন সন্তান যদি তার মায়ের চিরবিদায়ের সময় যদি তার পাশে না থাকে তাহলে সেই সন্তান কেন? তারা মনে করছেন যে, গ্রেপ্তারের ভয়, হুমকি যাই হোক না কেন, তারেক জিয়া তার মায়ের কোন পরিণতি হলে তার সেখানে অবশ্যই দেশে ফেরা উচিত এবং মায়ের শেষ বিদায়ে নেতৃত্ব দেয়া উচিত। কিন্তু তারেক জিয়ার মধ্যে এইটুকু মানবিকতা, আবেগ আছে কিনা এই নিয়ে এখন বিএনপি নেতাকর্মীরা সংশয় প্রকাশ করছেন। বরং বিএনপির মধ্যে এখন কান পাতলে শোনা যায়, তারা বলছেন যে তারেকের চেয়ে ফাতেমা আপন। ফাতেমা গ্রাম থেকে উঠে আসা একটি মেয়ে। যখন বেগম খালেদা জিয়ার সব নিকটাত্মীয়রা দূরে চলে গেলেন তখন ফাতেমাই গৃহপরিচারিকা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার সবকিছু তিনিই করতেন।
ফাতেমা আলোচনায় আসেন যখন বেগম খালেদা জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যান। কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফাতেমা অবস্থান করেন। একজন মানুষ কতটা আপন হলে, কতটা ত্যাগ স্বীকার করলে কোন অপরাধ না করে স্বেচ্ছায় বন্দী জীবন বেছে নিতে পারেন, ফাতেমা তার উদাহরণ। আর এ কারণেই ফাতেমাকে সে সময় অনেকে প্রশংসা করে। প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে সরকারও। কারণ বেগম খালেদা জিয়াকে দেখভাল করার জন্য একজন ব্যক্তিকে বিনা বিচারে কারাগারে থাকার অনুমতি দেয় সরকার। বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহপরিচারিকাসহ কারাবাস শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বে নজিরবিহীন একটি ঘটনা। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার কারণে সরকারি সেটির অনুমতি দেয়। আর তখনই আলোচনায় আসেন ফাতেমা। কারাগার থেকে বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি পাওয়ার পর গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার দেখভাল করা, তার ওষুধপত্র সহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড করছিলেন ফাতেমা। এখন যখন বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তখনও ফাতিমা তার পাশে। আইসিইউ এর পাশেই সার্বক্ষণিকভাবে থাকছেন তিনি এবং বেগম খালেদা জিয়ার দরকার তা দিচ্ছেন। ফাতেমা যেন বেগম জিয়ার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করছেন। দুদবছরের বেশি তিনি বেগম জিয়ার জন্য জেল খেটেছেন, বেগম জিয়াকে তিনি একজন অভিভাবকের মত লালন-পালন করেছেন। আর এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, যখন তার পুত্র নেই, পুত্রবধূ নেই তখন ফাতেমা যেন বেগম জিয়ার সবকিছু। আর এ কারণেই বিএনপির অনেকে বলছেন তারেকের চেয়ে ফাতেমা আপন।