নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শুক্রবার, নভেম্বর ২৬, ২০২১
শেষমেস
মেয়র পদও হারালেন জাহাঙ্গীর।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে
তার রাজনৈতিক জীবনের সব অর্জনকে বিসর্জন
দিতে হলো। গাজীপুরের মেয়র
নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১৮ সালে। তারপর
তিনি নিজেকে যেন জাতীয় নেতা
হিসেবে ভাবতে শুরু করেছিলেন। সবাইকে
তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এবং মন্ত্রী-এমপিদেরকেও পাত্তা না দেয়ার এক
উদগ্র প্রবণতা গাজীপুরের সদ্য পদচ্যুত মেয়রের
মধ্যে দেখা গিয়েছিল। কোনো
বিষয় নিয়েই আত্মম্ভরিতা, অরুচিকর, কুৎসিত কথাবার্তা বলার জন্য তিনি
আলোচিত হয়েছিলেন। সবাই তাকে ভয়
করতো। কারণ, আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার
পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি রাজনীতিতে হঠাৎ
বেড়ে উঠেছিলেন। জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,
ছাত্রলীগের রাজনীতির পর যেভাবে তার
উত্থান ঘটেছে তা বিস্ময়কর। আওয়ামী
লীগের মতো একটা রাজনৈতিক
দলের এভাবে কোন কর্মীর উত্থান
ঘটেনি।
২০১৪
সালের নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী
হয়েছিলেন। ওই প্রার্থী হওয়ার
কারণেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সংবিধানের রীতি অনুযায়ী এখানেই
তার রাজনৈতিক জীবনের ইতি হওয়ার কথা।
কিন্তু সেটি হয়নি। বরং
এরপর জাহাঙ্গীরকে লালন পালন করা
হয়েছে, পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে।
২০১৮
সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি সবাইকে
চমকে দিয়েছিলেন। বিজয়ী হওয়ার পর তিনি যেন
ধরাকে সরা জ্ঞান করেছিলেন।
একই সাথে পেয়েছিলেন গাজীপুর
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। এই দুইয়ে
মিলিয়ে জাহাঙ্গীর যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে
চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীরের
লাগাম টেনে ধরলেন, সিংহাসনচ্যুত
করলেন এবং জাহাঙ্গীরের এই
পতনের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো
শিক্ষা তিনি আওয়ামী লীগের
নেতাকর্মীদেরকে দিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীরের
ঘটনার মাধ্যমে যে শিক্ষাগুলো দিলেন
তার মধ্যে রয়েছে-
আওয়ামী লীগের
রাজনীতিতে
হঠাৎ
নেতা
হওয়ার
কোন
সম্ভাবনা
নেই:
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যদি কেউ হঠাৎ
নেতা হয়েও যায় তাহলে
তার পতন জাহাঙ্গীরের মতো
হয়ে যায়। কাজেই, আওয়ামী
লীগের রাজনীতি মানেই ধাপে ধাপে উত্তরণ।
কেউ যদি ধূমকেতুর মতো
হতে চায় তবে তার
পতন জাহাঙ্গীরের মতই হবে।
আদর্শের বাইরে
কাজ
করলে
কঠোর
পরিণতি:
শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সবাইকেই শিক্ষা দিলেন কেউ যদি দলের
আদর্শের বাইরে গিয়ে কাজ করে
তার পরিণতি কঠোর হবে। জাহাঙ্গীরের
যে অডিও টেপ প্রকাশিত
হয়েছে সেই অডিও টেপে
দেখা যাচ্ছে জাহাঙ্গীর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের
অনেক নেতার সম্বন্ধে কটূক্তি করেছেন। এ ধরণের কটূক্তি
করে যে পার পাওয়া
যাবে না শেখ হাসিনা
সেই বার্তাটি কঠোর ভাবেই দিলেন।
গ্রুপিং করে
বেশিদিন
টিকা
যায়
না:
জাহাঙ্গীর রাজনীতিতে এসে একটি গ্রুপিং
করেছিলেন। গাজীপুরের রাজনীতিকে তিনি বিভক্ত করেছিলেন।
আর সেই বিভক্তির কারণেই
গাজীপুরের রাজনীতিতে একটা অস্থিরতা তৈরি
হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ
হাসিনা যে দলের ভিতর
গ্রুপিং, বিভক্তি পছন্দ করেন না জাহাঙ্গীরের
মধ্য দিয়ে সকলকে সেই
বার্তাটা দিলেন।
একজন নেতাকে
ধরে
দলে
টেকা
যায়
না:
আওয়ামী লীগে জাহাঙ্গীরের গডফাদার
ছিলেন একজন নেতা। তাকে
ভর করেই জাহাঙ্গীর রাজনীতিতে
পাখা মেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা বুঝিয়ে
দিলেন যে, আওয়ামী লীগের
শেষ কথা হলো জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
এবং শেখ হাসিনা। এর
বাইরে কাউকে নেতা মেনে সাময়িক
ভাবে হয়তো লাভবান হওয়া
যায় কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কোন সুফল পাওয়া
যায় না।
শুধু টাকার
জোরে
টিকে
থাকা
যায়
না:
জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তির মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা প্রমাণ
করলেন শুধু টাকার জোরে
কেউ নেতা বেশিদিন থাকতে
পারে না। নেতা হলে
হলে আদর্শ লাগে, সংগঠন লাগে এবং দলের
প্রতি আনুগত্য লাগে। দলের প্রতি আনুগত্যহীন
টাকাওয়ালাদের জন্য শেখ হাসিনার
এটি একটি কঠিন বার্তা।
এই বার্তাগুলো আওয়ামী লীগ কিভাবে নিবে
সেটি দেখার বিষয়।
সৌজণ্যে:
বাংলাইনসাইডার