আসন্ন শীতকালে দেশের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকতে পারে। একইসঙ্গে জানুয়ারির শেষ ও ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়ার এই ব্যতিক্রম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এল-নিনোর প্রভাবে।
রবিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এবং রিজিওনাল মাল্টি হ্যাজার্ড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম ফর এশিয়া অ্যান্ড আফ্রিকা (RIMES) আয়োজিত ক্লাইমেট এপ্লিকেশন ফোরাম উইন্টার সেশনে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা মৌসুমি এই পূর্বাভাস তুলে ধরেন। এতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৪০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
প্রতি বছর শীত ও বর্ষাকালের শুরুতে সেই মৌসুমের আবহাওয়া কেমন থাকবে তা নিয়ে আলোচনার জন্য অংশীজনদের নিয়ে এই ফোরাম মিটিং আয়োজন করা হয়। এতে মৌসুমের শুরুতে মৌসুমী পূর্বাভাস বিভিন্ন অংশীজনের সাথে শেয়ার করা এবং বিভিন্ন খাতে আগত মৌসুমকে সামনে রেখে পরিকল্পনার ও পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
ফোরামে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. এস এম কামরুল হাসান জানান, বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার মডেলগুলোর তথ্য অনুযায়ী গত এপ্রিল থেকে এল-নিনো সক্রিয় রয়েছে। যার ফলে এই অঞ্চলের আবহাওয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এর প্রভাবে গেলো বর্ষায় বৃষ্টিপাতেও বড় ধরনের পরির্তন লক্ষ্য করা গেছে। যা আগামী শীতেও অব্যহত থাকবে।
তিনি বলেন, এল-নিনোর পুরোপুরি প্রভাব ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত থাকবে। তারপর কিছুটা কমতে থাকবে। সে বছরের জুলাইতে গিয়ে এল-নিনোর প্রভাব কমে ৪০ শতাংশে পৌঁছাবে। তবে পুরো ২০২৪ সাল জুড়েই এল-নিনোর প্রভাব থাকবে। এ কারণে আবহাওয়ার আচরণে বড় ধরনের অস্বাভাবিকতা লক্ষ্যায়িত হবে।
বাংলাদেশে চলমান এল-নিনো বিগত বছরগুলোতে আসা এল-নিনোর তুলনায় বেশি প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এল নিনোর কারণে ইতোমধ্যে গেল মাসগুলোতে তুলনামূলক কম বৃষ্টি হয়েছে। এবার শীতকালের তাপমাত্রায়ও অস্বাভাবিকতা থাকবে। শীতেও তেমন একটা তাপ কমবে না। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানয়ুারি মাসে দেশের অধিকাংশ জায়গায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী তাপমাত্রা থাকতে পারে। আবার ফেব্রুয়ারিতে অস্বাভাবিক বৃষ্টিও হতে পারে। এতে ফসলের বড় ধরণের ক্ষতির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
ক্লাইমেট এপ্লিকেশন ফোরামের এই উইন্টার সেশনের স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান সাম্প্রতিক সময়ে আবহাওয়া পূর্বাভাসের উন্নতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। সব অংশীজনকে সঠিক পূর্বাভাস ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করে তিনি বলেন, পূর্বাভাসের যথাযথ ফলাফলের জন্য মৌসুমী পূর্বাভাসের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদী, মধ্য-মেয়াদী এবং মাসিক পূর্বাভাসও অনুসরণ করতে হবে।
আয়োজকরা জানান, এই ফোরাম মূলত আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে আবহাওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত দফতরগুলোর সমন্বয়ের একটি ফোরাম। ক্লাইমেট এপ্লিকেশন ফোরাম উইন্টার সেশন কৃষি ক্ষেত্রে রবি মৌসুমে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেমন সাহায্য করবে, তেমনি অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন স্বাস্থ্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন, নৌ পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে
গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা তাদের।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে RIMES এর জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রতিনিধি রায়হানলু হক খান এবং UK Met Office এর জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড্যান রায়ানসহ দেশের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।