ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

রেলপথে সমুদ্র সৈকতে যাত্রার স্বপ্নপূরণের দিন আজ

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, নভেম্বর ১১, ২০২৩

রেলপথে সমুদ্র সৈকতে যাত্রার স্বপ্নপূরণের দিন আজ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পালা শেষ হচ্ছে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার নবনির্মিত রেললাইনের উদ্বোধন করবেন আজ শনিবার (১১ নভেম্বর)। শুধু রেলপথ ও আইকনিক রেলস্টেশন নয়, এ দিন সমাপ্ত হওয়া ১৩টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৩টি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য ফলক তৈরি করা হয়েছে। উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তরযোগ্য প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।

বৃটিশ-পাকিস্তান পিরিয়ড ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের স্বপ্ন দেশের সর্বদক্ষিণ জেলার সাথে সরাসরি রেল সংযোগ। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বহু সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। কিন্তু কোনো সরকারই কক্সবাজারে রেল সংযোগের বিষয়ে মাথা ঘামায়নি। তবে, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরই রেল সংযোগে সারাদেশের সাথে কক্সবাজারকে যুক্ত করতে প্রকল্প হাতে নেয় আওয়ামী লীগ।

সেই প্রকল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকমানের আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটন শহর কক্সবাজারে। এই স্টেশনে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সবধরনের ব্যবস্থা। শুধু রেল যোগাযোগের জন্য নয়, পর্যটনের নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচ্য হচ্ছে দেশের একমাত্র আইকনিক এই রেলস্টেশন, এমনটি অভিমত কক্সবাজারের সচেতন মহলের।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ঝিলংজায় ২৯ একর জমিতে দুইশ ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে চোখ ধাঁধানো রেলওয়ে স্টেশন। মূল স্থাপনাটি যেন সমুদ্রের ঝিনুকেরই বিমূর্ত রূপ। ছাদটি স্টিলের তৈরি ক্যানোপি, আর চতুর্পাশে রয়েছে কাঁচের দেয়াল। দিনের আলো সরাসরি প্রবেশ করবে স্টেশনের ভেতরে। অত্যাধুনিক নির্মাণশৈলী ও পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যও এতে দৃশ্যমান।

প্রখ্যাত স্থপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহর স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ভলিউমজিরো লিমিটেড এর স্থাপত্য নকশা করেছে বলে জানা গেছে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ছয়তলার এই স্টেশনে রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি, মালামাল রাখার লকার, হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমলসহ আধুনিক সব সুবিধা। ৪৬ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা সম্বলিত স্টেশনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে আছে কনভেনশন হল, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ, এমনকি প্রার্থনার স্থানও। স্টেশনে ফুড কোর্ট, হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্সের বিষয়টি বাইরের এজেন্সি দ্বারা টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে।

ভবন ও আশপাশের রেলপথ নির্মাণ কাজের প্রকৌশলী এনামুল হক সরকার এনাম বলেন, অবকাঠামোসহ আইকনিক স্টেশন ভবন পর্যটক বরণে পুরোপুরী প্রস্তুত। সামগ্রিকভাবে প্রায় ৯২শতাংশ কাজ শেষ। রেলপথের সক্ষমতা যাচাইয়ে ৫ নভেম্বর পরিদর্শন রেল এসে ঘুরে গেছে। ১১ নভেম্বর উদ্বোধনের জন্য স্টেশনে এসেছে আধুনিক সুবিধার একটি ট্রেন। উদ্বোধনের পরপরই সম্ভব না হলেও মাস দেড়েক পর বাণিজ্যিকভাবে কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ শুরু করা যাবে বলে। তবে কার্যাদেশ অনুসারে চলতি অর্থবছরের শেষসময়ে কাজ পুরোপুরি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওয়াহিদ রহমান রুবেল বলেন, শনিবার আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের দিন। খুরুশকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রিয়াদ বলেন, কক্সবাজারের সাথে উপকূলের বাধাহীন যোগাযোগ স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দাবিও বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রামের মিরসরাই-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে সংযোগের জন্য ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে কস্তরাঘাটে নির্মাণ করেছেন প্রায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন সেতু। শনিবার এটিও উন্মুক্ত করা হচ্ছে। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে এতগুলো স্বপ্ন বাস্তবায়নে দলীয় নেতাকর্মীসহ আমজনতা খুবই খুশি।  

কক্সবাজারের পর্যটন উদ্যোক্তা ও তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের চেয়ারম্যান এম এন করিম বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত সমেত কক্সবাজার ঘিরে পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। একে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে হলে নতুন উদ্বোধন হতে যাওয়া রেলপথ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। সমৃদ্ধ হবে পর্যটন শিল্প,  এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রেলপথ-আইকনিক স্টেশন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে কক্সবাজারে শিল্প উদ্যোক্তা বাড়বে বলে আশা করা যায়। যোগাযোগ সহজতর হলে সমৃদ্ধ হবে পর্যটনও।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, এত উন্নয়ন অতীতে কোন সরকার করতে পারেনি। দেশরত্ন শেখ হাসিনার বদান্যতায় উদ্বোধন হতে যাওয়া রেলপথ ও আইকনিক স্টেশন জেলাবাসীর শতবছরের স্বপ্নপূরণ করছে। বাস্তবায়িত ও চলমান প্রকল্পের সূত্রধরে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জেলাবাসী নৌকার জয় সুনিশ্চিত করবেন বলে আশাবাদী আমরা।

জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. খোরশেদ আলম ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, একাদশ নির্বাচনে জেলার চার আসনে নৌকার প্রার্থী জয়ী হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ বিরোধী মতাদর্শই বেশি দেখা গেছে। এসব চিত্র এড়িয়ে টানা তিনবার সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ কক্সবাজারকে ঘিরে লক্ষ-কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে রেল, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। শনিবার ১৭টি প্রকল্প উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই দিনটিকে কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নপূরণের দিনই বলা যায়।
 
দোহাজারী-কক্সবাজার ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ শুরু হয়ে ২০১৩ সালে শেষ হবার কথা ছিল। তবে, ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল একনেকে অনুমোদিত হয় এবং এ লাইনে ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়। এই বাজেটে এডিবি ঋণ দেয় ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা আর বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।

একনেক অনুমোদনের পর, প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১০ সালের ১ জুলাই-২০২২ সালের ৩০ জুন ধরা হয়। এ রেলপথ নির্মাণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় এক হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দিতে বিলম্ব হয়। প্রকল্পের ১৬৫ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল ডি-রিজার্ভকরণসহ প্রকল্পে ব্যবহারে অনুমতি পেতে কালক্ষেপণ হয়। ২০১৯ সালের শেষাংশে শুরু হয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলভুক্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকার গাছপালা কাটা ও ভৌত কাজ। পিজিসিবি, বিপিডিবি ও বিআইবি’র বৈদ্যুতিক টাওয়ার ও পোল স্থানান্তরে চারদফা বৈঠক হয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ে। এসবের সাথে যোগ হয় করোনা মহামারি। ২০২০ সালে প্রায় দেড়মাস বন্ধ থাকায় প্রকল্পের কাজে বিঘ্ন ঘটে। বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে আমদানিকৃত বিভিন্ন মালামাল সঠিক সময়ে দেশে এসে পৌঁছেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সবকাজ শেষ হতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এই সময়ের আগেই আজ ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার রেলপথ ও আইকনিক রেল স্টেশন উদ্বোধন করবেন।