রেলপথে নাশকতা রোধে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রেলওয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অবরোধের মধ্যে সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে প্রায় ৭০ হাজার আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে আনসার সদস্যরা রাত-দিন লাইন পাহারাসহ স্টেশন এবং ট্রেনের নিরাপত্তায় কাজ করছে। একই সঙ্গে রেলওয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় জনগণ নাশকতা রোধে সোচ্চার। প্রসঙ্গত, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রেলপথ, স্টেশন এবং ট্রেনে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করা হয়। লাইনে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি উপড়ে ফেলা হয় স্লিপারসহ লোহার পাত। ব্রিজের স্লিপার খুলে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটেছিল। এবারও বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দাবি আদায়ে অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করছে।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অবরোধে ট্রেনযাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। কমলাপুরসহ বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী বেশি। বৃহস্পতিবার সকালে কমলাপুর থেকে মহানগর প্রভাতি ট্রেনে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন আলম খান নামের এক যাত্রী। সঙ্গে ছিল তার পরিবারের ৫ সদস্য। তিনি জানালেন, অবরোধে সড়কপথে ভয়ভীতি থাকেই, ট্রেনেও শঙ্কা আছে। তবে রেলের নিরাপত্তায় ভরসা রাখা যায়। রাজশাহী থেকে আসা যাত্রী জামাল উদ্দিন বললেন, অবরোধে ট্রেন সময়মতো চলছে। তাই ট্রেনে যাত্রীদের চাপ বেশি। আর যেহেতু রেলপথে এখনো কোনো নাশকতা হয়নি, এ কারণে সাধারণ যাত্রীরা রেলপথকে নিরাপদ মনে করছে।
অবরোধের মধ্যে রেলপথে নাশকতা ঘটতে পারে-এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রেলপথ পাহারায় নিয়োজিত রয়েছে সংশ্লিষ্টরা। যাত্রী এবং মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন ও গার্ডের কামরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সতর্ক অবস্থানে থাকছেন। সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রেলপথজুড়ে অবস্থান করলেও যাত্রীরা আরও নিরাপত্তা চান। এমনটাই জানিয়েছেন অনেক ট্রেনযাত্রী। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সীতাকুণ্ডসহ রেলওয়ের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক নাশকতার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি (ট্রেনিং, ক্রাইম ও অপস) মো. শাহ আলম জানান, রেলপথের যাত্রী ও মালামাল রক্ষায় রেলওয়ে পুলিশ সর্বদা সতর্কাবস্থায় আছে। স্টেশন, লাইন ও ট্রেনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করছি। রেল জাতীয় সম্পদ, এ সম্পদ রক্ষা সবারই দায়িত্ব।
এ প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, নাশকতাকারীরা হরতাল-অবরোধে রেলপথকেও টার্গেট করে। ইতঃপূর্বে এমনটা ঘটেছে। জেলা পুলিশ রেলপথ নিরাপত্তায়ও বিশেষ সতর্কাবস্থায় আছে। আমরা জানি, ট্রেনে শত শত যাত্রী চলাচল করে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমরা সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকি। ইতঃপূর্বে আমরা জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সমাজের গণমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বৈঠকও করেছি। শুধু রেলে নয়, পুরো জেলায় যে কোনো ধরনের নাশকতা রোধে তারা সোচ্চার। এছাড়া গ্রাম পুলিশ, আনসার সদস্যরাও রেল নিরাপত্তায় কাজ করছে। এদের তদারকি করছে আমাদের পুলিশ।
রেলওয়ে পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. দিদার আহমেদ বলেন, অবরোধ কিংবা হরতালের সময় স্টেশনে যাত্রী প্রবেশ ও বাহিরের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। সন্দেহজনক যাত্রীদের তল্লাশিও করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ট্রেনের ভেতরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনী এবং আনসার সদস্যরা নিরাপত্তায় কাজ করছেন।
রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মফিজুর রহমান জানান, রেল সরকারি সম্পদ, এ সম্পদ রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। ট্রেন সাধারণ যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। রেলপথে নাশকতা বর্বরতাকেও হার মানায়। হরতাল-অবরোধের মধ্যেও ট্রেন স্বাভাবিক নিয়মে চালানো হয়। রাতদিন লাইনে টহল দেওয়া হচ্ছে। স্টেশন এবং রেলওয়ে স্থাপনাগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে গত ২-৩ দিন কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। সাধারণ যাত্রীরা রেলপথকে নিরাপদ মনে করছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সফিকুর রহমান জানান, হরতাল কিংবা অবরোধ আমরা যথাসময়ে ট্রেন চালাচ্ছি। কখনো কখনো সাধারণ সময়ের চেয়ে বর্তমানে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হচ্ছে।
ঢাকা রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহআলম কিরণ শিশির বলেন, স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলায় যাত্রীও বাড়ছে। বাড়ছে আয়ও। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ম্যানেজার মাসুদ সরওয়ার বললেন, প্রতিদিনই ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যাত্রীরা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ট্রেন ভ্রমণ করছেন।