টানা ১ মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরাইল। দিন দিন আরও করুণ হচ্ছে পরিস্থিতি। অবরুদ্ধ গাজায় প্রতিনিয়তই চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। অমানবীয় এ হামলা রুখতে জাতিসংঘ ব্যর্থ। নিজেদের সেই ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করেছে জাতিসংঘ। বুধবার রয়টার্স আয়োজিত নিউইয়র্কের একটি সম্মেলনে এমন মন্তব্যই করলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বললেন, গাজার গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘের কাছে অর্থ এবং ক্ষমতা কোনোটাই নেই। তাস।
গাজায় গণহত্যা বন্ধে কী কী পদক্ষেপ রয়েছে জাতিসংঘের হাতে? এই প্রশ্নের উত্তরে মহাসচিব বলেন, আমাদের ক্ষমতা, অর্থ নেই। তবে আমাদের আওয়াজ ও প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে কতর্ব্যরতরা সরকার, সুশীল সমাজ এবং ব্যবসায়ীদের একত্রিত করতে পারে এবং সবাই মিলে আমাদের সময়ের যাবতীয় সমস্যাগুলোর সমাধানের চেষ্টা করতে পারে। পাশাপাশি গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন নিয়ে সমালোচনাও করেছেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘গাজায় ইসরাইলি হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি হচ্ছে। অধিক সংখ্যক বেসামরিকের মৃত্যুই বলে দিচ্ছে ইসরাইলের সামরিক আক্রমণে স্পষ্টত কিছু ভুল রয়েছে।’ রয়টার্স।
ইসরাইলের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে অবরুদ্ধ গাজা এখন মৃত্যুপুরী। অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে ১ মিনিটেরও নিশ্চয়তা নেই জীবনের। বর্বরোচিত হামলার পাশাপাশি বন্ধ করা হয়েছে বেসামরিকদের সব মৌলিক চাহিদা। চরম নির্দয়তার শিকার অবুঝ শিশুরাও। গণহারে হত্যা করা হচ্ছে তাদের। আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে হাসপাতালগুলোতেও চালানো হচ্ছে হামলা। এতশত অন্যায়-অবিচারের মাঝেও চুপ হয়ে আছে আরব ও মুসলিম বিশ্ব। নীরবতা ভেঙে যারাই একটু-আধটু কথা বলছে তাদের অনেকেই দেখাচ্ছে কূটনৈতিক কৌশল। জোর সমর্থনে গাজার পাশে দাঁড়াচ্ছে না কেউই। আরব দেশগুলোর এমন দ্বৈততা এবং ঐক্যহীনতায় ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনের সশস্ত্র রাজনৈতিক বাহিনী হামাস। তিরস্কারের সুরে দলটির উপপ্রধান সালেহ আল-আরউরি বলেছেন, আরব দেশগুলো ইসরাইল সম্পর্কে যে কোনো বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম। বৃহস্পতিবার হামাসের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এ বিবৃতি দেন তিনি।
দুঃখ প্রকাশ করে আল-আরউরি আরও জানান, যারাই তাদের পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছে তাদের বিপক্ষেও বিরুদ্ধাচার করছে অসংখ্য আরব দেশ। তিনি বলেন, ‘ইয়েমেন আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইসরাইলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করছে। তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয় বরং আরব দেশগুলোও এর বিরোধিতা করছে।’ এমনই চলতে থাকলে ‘মানুষ এবং সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টিতে তারা (আরবরা) তাদের মর্যাদা হারাতে পারে।’ অন্যদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। অবরুদ্ধ গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হামলা বন্ধের প্রচেষ্টায় কাজ করবে দেশটি। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেন, গাজার চলমান সংকট নিরসনে ‘বৈশ্বিক পদক্ষেপ’ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারপন্থি সংবাদমাধ্যম হুরিয়েত থেকে জানা যায় এরদোগান বলেছেন, ‘আমি প্রত্যেক বিশ্বনেতাকে ফোন করব। তাদের সঙ্গে আলোচনা করব এবং প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে দেখা করব। আমি নেতা, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গাজার বিষয়ে একটি যৌথ উদ্যোগ শুরু করতে চাই।’
১ হাজারেরও বেশি মার্কিন সাহায্য সংস্থা কর্মীদের চিঠি: ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) কর্মীরা। বুধবার পর্যন্ত চিঠিতে সাক্ষরের সংখ্যা ১ হাজারে পৌছেছে। চিঠিটি গত শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সর্বপ্রথম প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন ও ওয়াশিংটন পোস্ট। ইসরাইলের ‘আন্তর্জাতিক আইনের অসংখ্য লঙ্ঘন’ ও গাজায় ক্রমবর্ধমান বেসামরিক মৃত্যুর নিন্দা জানানো হয়েছে এতে।
বলা হয়েছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি যুক্তরাষ্ট্র সরকার গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি ও গাজার জনগণের জন্য পানি, খাদ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানালেই মানবজীবনের আরও বিপর্যয়কর ক্ষতি এড়ানো সম্ভব’। ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের উপর অবৈধ দখলদারিত্ব ও বসতি স্থপনের অবসানের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। বলেছেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে ইসরাইল সহ সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আনতে আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আহ্বান জানাই’। যুদ্ধ বন্ধ না করে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌছানো যথেষ্ট নয় বলেও জানিয়েছেন তারা।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে ৩ হাজার সাক্ষরকারীদের ৩,০০০ স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ২ হাজার ৯০০ জন যুক্তরাজ্যের ডাক্তার ও মেডিকেল ইউনিয়নের সদস্য।