ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে আ.লীগের দুই প্রার্থী জয়ী

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: সোমবার, নভেম্বর ৬, ২০২৩

নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে আ.লীগের দুই প্রার্থী জয়ী
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) ও লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। 

রবিবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। ভোটগ্রহণ শেষে রাতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফলাফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে গোলাম ফারুক পিংকু বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে হওয়া এই নিয়ম রক্ষার নির্বাচনেও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন পরাজিত প্রার্থীরা। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী। অপরদিকে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।

এই আসনে ৫০ বছর পর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৭৩ সালের পর রবিবারের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রথম বিজয় এটি। উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার মৃত্যুতে শূন্য হয় আসনটি। 

রবিবার রাতে এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণা করেন। এতে শাহজাহান আলম সাজু ২৮ হাজার ৭৫৭ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ১৩৩টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে শাহজাহান আলম সাজু পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা কলার ছড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট। এ ছাড়া লাঙ্গল প্রতীকে অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী পেয়েছেন ৩ হাজার ১৪২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. জহিরুল ইসলাম জোয়েল পেয়েছেন ৫৬১ ভোট এবং আম প্রতীকে পিপলস পার্টির আব্দুর রাজ্জাক পেয়েছেন ৭৩৯ ভোট। এই নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৫১৪ হাজার। যা মোট ভোটের ২৭ দশমিক ১৩ ভাগ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা। তিনি বলেন, ‘আমাকে পরাজিত করতে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভোটার তালিকায় গরমিল করাসহ আমার ভোটারদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আশুগঞ্জের কয়েকটি কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যালটে সিল মেরেছে। অন্তত সাতটি কেন্দ্রে কারচুপি চলেছে।’

জিয়াউল হক মৃধা অভিযোগ করে বলেন, সরাইলের প্রায় সবকটি ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করা ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। কারচুপির অংশ হিসেবে ইচ্ছাকৃতভাবেই এটি করা হয়েছে। এ ছাড়া আশুগঞ্জের শরীফপুর, আন্দিদিল, যাত্রাপুর, বড়তল্লা, টেকেরপাড়, চরচারতলা ও নাওঘাট কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। শরীফপুর কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বাতিলের দাবি জানান তিনি। 

অভিযোগ সম্পর্কে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। যেহেতু নির্বাচনী ব্যস্ততায় সময় কম, তাই লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বসাক বলেন, ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন থেকে যে তালিকা আমাদের দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকাই আমরা ভোটের সরঞ্জামের সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে পাঠিয়েছি। কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজু বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে এটি সত্য নয়, এটি ভিত্তিহীন। ভোটার উপস্থিতি কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, একই আসনে তিনবার নির্বাচন হচ্ছে, সে কারণে ভোটারদের আগ্রহ কিছুটা কম।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়া মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। বিএনপির দলছুট নেতা আব্দুস সাত্তার ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। পরে গত বছরের ডিসেম্বরে দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুস সাত্তার।

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের শূন্যপদে উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকু ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৫৩ ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। রবিবার রাত ৮টার দিকে উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বেসরকারিভাবে পিংকুকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনে পিংকু ১ লাখ ২০ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ৩ হাজার ৮৪৬ ভোট পেয়েছেন। এ ছাড়া গোলাপ ফুল প্রতীকে ২ হাজার ১২৬ ও আম প্রতীকের প্রার্থী ৫১৩ ভোট পেয়েছেন। বিজয়ী গোলাম ফারুক পিংকু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।