রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচলে নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে। আজ থেকে নতুন রেলপথে পদ্মা সেতু হয়ে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। নতুন রুটে নিরাপদে ও স্বল্পসময়ে ভ্রমণ করবেন যাত্রীরা। বর্তমানে ঢাকা থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে একধরনের ঝুঁকি নিয়েই ট্রেন চলাচল করছে। ওই রুটে নির্ধারিত ট্রেনের প্রায় দ্বিগুণ ট্রেন চলাচল করছে। এতে ট্রেনের ধীরগতিসহ যাত্রীঝুঁকিও বাড়ছে। এ অবস্থায় আজ থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস নতুন রুট পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে। কাল থেকে একই রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকার সঙ্গে চলাচল করবে। একই সঙ্গে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ঢাকা-ভাঙ্গা ৮২ কিলোমিটার রেলপথে ৫ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে যাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ পথে ট্রেনের ভাড়াও কমানো হয়েছে।
এতদিন সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চলাচল করত। ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল পর্যন্ত ট্রেন দুটি পৌঁছতে সময় লাগত প্রায় ১১ ঘণ্টা। নতুন রুট পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা পৌঁছতে ট্রেন দুটির সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টা। নতুন রুটে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন চলবে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে বর্তমানে প্রতিদিন ৪৮টি ট্রেন চলাচল করছে। এ রুটে সিঙ্গেল লাইনের ক্ষমতা রয়েছে এর অর্ধেক ট্রেন চালানোর। কিন্তু বিকল্প রুট ও ডাবল লাইন না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন ৪৮টি ট্রেন চলাচল করছে। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই রুটে ঝুঁকি কমাতে ও দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রেন চালাতে নতুন রুট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। পর্যায়ক্রমে আরও ট্রেন নতুন এ পথে চালানো হবে। একই সঙ্গে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত আরও ৫ জোড়া (১০টি) ট্রেন চালানোর সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে প্রস্তুত ট্রেনগুলো চালানো হবে।
ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. শাহ আলম কিরণ শিশির বলেন, যাত্রীসেবা বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও গতি বাড়াতে রেলে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যেসব ট্রেন চলাচল করছে, এর মধ্যে বেশকিছু ট্রেন নতুন রুট পশ্চিমাঞ্চল থেকে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু পারি দিয়ে ঢাকার সঙ্গে চলাচল করবে। শাহ আলম শিশির আরও বলেন, নতুন রুটে চলা ট্রেনগুলো কমলাপুর স্টেশন ৮, ৯ ও ১০ নম্বর প্ল্যাটফরম হয়ে চলাচল করবে। ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন রেলপথে যথাযথ গতি নিয়ে ট্রেন চালাতে লোকবলসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ (৭২৫) খুলনা ছাড়বে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে এবং ঢাকা পৌঁছাবে ভোর ৫টা ১০ মিনিটে। অন্যদিকে এ ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে এবং খুলনা পৌঁছাবে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে। অন্যদিকে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ (৭৯৫) ট্রেনটি বেনাপোল ছাড়বে বেলা ১টায় এবং ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। অন্যদিকে এই ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ও বেনাপোল পৌঁছাবে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে।
এদিকে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চালু হওয়া রেলসেবায় ভাড়া কমিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এই পথে আন্তঃনগর ট্রেনে (নন-এসি) ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা। তা কমিয়ে ২৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ভাড়া কমল ১১৫ টাকা।
আজ থেকে চলা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে ভাঙ্গা, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও যশোর হয়ে খুলনায় যাবে। বেনাপোল এক্সপ্রেস একই পথ ধরে যাবে যশোরের বেনাপোল পর্যন্ত। পদ্মা সেতু হয়ে আরও বেশ কয়েকটি ট্রেন নতুন রুটে চলবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক। ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চলা কিছু ট্রেন নতুন রেলপথ (পদ্মা সেতু হয়ে) ধরে চলবে-এমন সংবাদে সাধারণ ট্রেনযাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছে। এতদিন যে ট্রেন ১১ ঘণ্টায় ঢাকা-পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করত, সেই ট্রেন নতুন রুটে মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টায় চলবে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সরওয়ার বলেন, যাত্রীরা আগের নিয়মেই অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন। আমরা কমলাপুর স্টেশনে থেকেও নির্ধারিত আসনবিহীন টিকিট বিক্রি করছি।