নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, নভেম্বর ২৪, ২০২১
দেশের
বিভিন্ন স্থানে একের পর এক যে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, তা পরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্রের অংশ
হিসেবেই মনে করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তারা বলছে যে, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য
এক ধরনের পরিকল্পিত নাশকতার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক কুমিল্লার মুখোশধারীদের গুলিতে
কাউন্সিলরসহ ২ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর এ সংক্রান্ত ঘটনাটি নিশ্চিত হয়েছে বিভিন্ন
গোয়েন্দা সংস্থা। তারা মনে করছে যে, বিএনপি-জামাত এবং জঙ্গী কিছু সংগঠন বাংলাদেশকে
অস্থিতিশীল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের সহিংসতা ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।
সাম্প্রতিক
সময়ে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং এই সমস্ত সহিংসতায়
৪০ জনের বেশী মানুষ মারা যায় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫ হাজারের বেশি মানুষ সংঘর্ষে
আহত হয়। এই ধরনের ঘটনাগুলোর পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করতে
গিয়ে দেখেছে যে নির্বাচনী সহিংসতাযর আড়ালে এখানে এক ধরনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে।
বিশেষ করে একটি মহল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে, এটি দেখিয়ে
জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নেয়ার চেষ্টা করছে। আর এ কারণেই তারা একের পর এক এ ধরনের অপতৎপরতা
চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের ভেতরে সহিংসতা দেখিয়ে বা সহিংসতায় উস্কানি
দিয়ে তারা রাজনীতিতে ভিন্ন ধরনের ফায়দা হাসিল করতে চাইছে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত
করেছে। সবগুলো ঘটনাই যে রাজনৈতিক সহিংসতা এমন নয়। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে
জানা গেছে যে, তিনভাবে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটনাগুলো ঘটছে।
প্রথমত,
আওয়ামী লীগের ভেতরে বিএনপি-জামাতপন্থী কিছু ষড়যন্ত্রকারী ঢুকে আছে, যারা সব সময়
চেষ্টা করছে যে, আওয়ামী লীগের ভিতরে কোন্দল, বিভক্তি ইত্যাদিকে উস্কে দিয়ে একটি সন্ত্রাস,
সহিংসতা তৈরি করতে। দ্বিতীয়ত, বিএনপি-জামাতপন্থীরা
ছদ্মবেশে বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে। বিএনপি-জামাত এবার নির্বাচনে দলীয়
পরিচয় ব্যবহার করছে না। তারা দলীয় প্রতীকও ব্যবহার করছে না। কাজেই তাদের জন্য এ ধরনের
সহিংসতার ঘটনা খুবই সহজ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদ নিয়ে যত
না বিরোধ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বিরোধ হচ্ছে ওয়ার্ড নিয়ে এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের
এই বিরোধগুলো করার ক্ষেত্রে বিএনপি-জামাতের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রয়েছে। তৃতীয়ত, প্রশাসনের একটি অংশ এ ধরনের ঘটনাগুলোকে বাড়তে দিচ্ছে এবং মদদ
দিচ্ছে। মাঠ প্রশাসনে জামাত এবং বিএনপিপন্থীদের এখন সক্রিয় তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শারদীয় দুর্গাপূজার সময় সহিংসতা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ঘটনার বিশ্লেষণ
করলে দেখা যায় যে, সেখানে প্রশাসনের এক ধরনের নীরবতা ছিল এবং ব্যর্থতা ছিল। প্রশাসনের
যথাযথভাবে ভূমিকা পালন করেনি।
আর
এ কারণেই অনেকে মনে করছেন যে, বিএনপি জামাতের তৎপরতা আওয়ামী লীগে বিএনপি-জামাতপন্থী
অনুপ্রবেশকারীদের ষড়যন্ত্র এবং প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের নির্লিপ্ততার মাধ্যমে
দেশে হঠাৎ করে সন্ত্রাস, হত্যা, সহিংসতা বাড়ার একটি প্রবণতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যাতে
জনগণের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। সাধারন মানুষ নিজেরাই এক অন্যকে প্রশ্ন করে,
দেশে হচ্ছেটা কি? অর্থাৎ একটা অনিশ্চয়তার আবহ দেশে তৈরি করার জন্যে এটি করা হয়েছে।
সমস্ত দোষ আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি
করছে, এমন একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বলছে
যে, তারা এই ঘটনার মূল হোতাদেরকে চিহ্নিত করে ফেলেছে এবং এই ধরনের পরিকল্পিত নাশকতা
যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।