নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, নভেম্বর ২৪, ২০২১
আওয়ামী
লীগ থেকে বহিষ্কৃত গাজীপুর
সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর
আলমকে কীভাবে মেয়রের পদ থেকে সরানো
হবে, সেই উপায় খুঁজছে
সরকার। ফলে এটা কার্যকর
হওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা
মাত্র। সরকার জাহাঙ্গীরের দল থেকে বহিষ্কার-সংক্রান্ত আওয়ামী লীগের চিঠির অপেক্ষায় আছে। কারণ, তিনি
আওয়ামী লীগের প্রতীকে জিতে মেয়র হয়েছিলেন।
স্থানীয়
সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের চিঠি পাওয়ার পর
জাহাঙ্গীরকে মেয়রের পদ থেকে সরাতে
আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবেন তাঁরা।
তার আগে এ-সংক্রান্ত
আইন-কানুনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
তবে
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম স্পষ্ট করে দিয়েছেন, জাহাঙ্গীরের
মেয়র পদ থাকবে কি
না, সে বিষয়ে দু-এক দিনের মধ্যে
সিদ্ধান্ত আসতে পারে। গতকাল
সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আইনটা
দেখা হচ্ছে। আমাদের বিভাগ আছে, তারা পর্যালোচনা
করছে।’ আইনি পর্যালোচনা শেষে
পদক্ষেপ নিতে কত দিন
লাগতে পারে, সে প্রশ্নে তিনি
বলেন, ‘দু-এক দিন
লাগতে পারে।’
স্থানীয়
সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ
গতকাল বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ
থেকে মেয়র জাহাঙ্গীরকে নিয়ে
এখনো লিখিত কিছু পাইনি, দল
থেকেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
এখন আমরা আইনকানুনগুলো খতিয়ে
দেখছি।’
আওয়ামী
লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে
জিতে ২০১৮ সালে গাজীপুর
সিটি করপোরেশনের মেয়র হন জাহাঙ্গীর।
বঙ্গবন্ধু ও শহীদ বীর
মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের
জন্য ১৯ নভেম্বর আওয়ামী
লীগ থেকে বহিষ্কার হন
তিনি। দলীয় প্রতীকে মেয়র
নির্বাচিত হওয়ার পর দল থেকে
বহিষ্কার হলে মেয়র পদের
কী হবে—স্থানীয় সরকার
(সিটি করপোরেশন) আইনে তার কোনো
ব্যাখ্যা নেই।
স্থানীয়
সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন,
‘জাহাঙ্গীরকে যে দল থেকে
বহিষ্কার করা হয়েছে, সেটা
জানিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের চিঠিতে
কী লেখে—এখন এটাই
গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আওয়ামী লীগের চিঠিকে ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়েই আমাদের
পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
ওই
কর্মকর্তা বলেন, এখন যে পরিস্থিতি
দাঁড়িয়েছে, তাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা
আইনে যেকোনো সময় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে
মামলা হতে পারে। সেই
মামলায় অভিযোগ গঠন হলে মেয়রকে
পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত
করে নোটিশ দেওয়া যাবে। নোটিশের জবাব পেয়ে স্থায়ীভাবে
বরখাস্ত করা যাবে। তবে
এটা একটু সময়সাপেক্ষ।
ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারায় বলা
আছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি
ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার
বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা
ও প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ
প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত
ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।’
সিটি
করপোরেশন আইনের বিধানগুলো তুলে ধরে স্থানীয়
সরকার বিভাগের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, আইনের ১৩ ধারায় মেয়র
ও কাউন্সিলরদের অপসারণ নিয়ে বলা আছে,
অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের
দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে
অপসারণ করা যাবে। কিন্তু
এ আইনে অসদাচরণের সংজ্ঞা
নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।
ফলে এটা ধরেই যে
কাউকে অপসারণ করা সম্ভব। মেয়র
ও কাউন্সিলরদের সাময়িক বরখাস্ত করা নিয়ে আইনের
১২ ধারায় বলা আছে, ‘যেক্ষেত্রে
কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র
অথবা কাউন্সিলরের অপসারণের জন্য ধারা ১৩-এর অধীন কার্যক্রম
আরম্ভ করা হইয়াছে অথবা
তাহার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রে সরকার,
লিখিত আদেশের মাধ্যমে, ক্ষেত্রমত, মেয়র বা কোনো
কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পারিবে।’
ওই
কর্মকর্তা বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে মেয়র
নির্বাচিত হওয়ার পর দল থেকে
বহিষ্কার হলে কী হবে,
আইনে যেহেতু তার কোনো ব্যাখ্যা
নেই, এ জন্য অসদাচরণের
অভিযোগ তুলে জাহাঙ্গীরকে প্রথমে
সাময়িক বরখাস্ত করা যাবে। এরপর
তাঁকে অপসারণের প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আওয়ামী
লীগের চিঠি পাওয়ার পর
সরকারকে সেদিকেই যেতে হবে।’
দল
থেকে বহিষ্কার হওয়ায় আদালতে গিয়ে জাহাঙ্গীরকে মেয়র
পদ থেকে সরানোর পথ
রয়েছে বলে মনে করেন
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল
আলম মজুমদার। গতকাল আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, কাউন্সিলরা
চাইলে মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে পারেন। আবার
যেকোনো অভিযোগ তুলেও তাঁকে বরখাস্ত করা সম্ভব। তবে
অভিযোগটা সত্যিকারের না হলে সেটি
তোলা ঠিক হবে না।
এসবের বাইরে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে
আদালতে গেলেও জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে
সরানো সম্ভব। কেউ যদি মনে
করে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক দেখেই
জাহাঙ্গীরকে তিনি ভোট দিয়েছিলেন,
এখন জাহাঙ্গীর আর আওয়ামী লীগের
লোক নন বলে তাঁর
ওপর আস্থা নেই। কেউ আদালতে
এমন অভিযোগ করলে আদালত সেটা
বিবেচনায় নিতেও পারেন।
ফ্রিডমবাংলানিউজ/খাইরুল