ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪ |

EN

এত মৃত্যু আগে দেখেনি ফিলিস্তিন

বিশ্ব বাংলা ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, অক্টোবর ২২, ২০২৩

এত মৃত্যু আগে দেখেনি ফিলিস্তিন
যুগ যুগ ধরে ইসরাইলের নৃশংসতার শিকার হয়ে আসছে অসহায় ফিলিস্তিন। ১৯৪৮ থেকে ২০২৩ সাল ৭৫ বছরের টানা আগ্রাসনে ভিটেমাটি হারিয়েছে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। লাশের পাহাড়ে দেখেছে বুলেট-বোমায় ঝাঁঝরা প্রিয়জনের ক্ষতবিক্ষত শরীর। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ৭ অক্টোবর থেকে আবারও শুরু হওয়া ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে। মৃত্যুর মিছিলে কাঁদছে গোটা গাজা জনপদ। নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩৮৫ জনে। যার মধ্যে এক হাজার ৭৫৬ জন শিশু। ৯৬৭ জন নারী। আহতের সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৬১ জন। এত মৃত্যু আগে দেখেনি ফিলিস্তিন। 

ফিলিস্তিনে এবারের নিহতের সংখ্যা তার দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন) সংখ্যাকেও হার মানিয়েছে। রয়টার্সের পরিসংখ্যান অনুসারে, নিহতের সংখ্যা ছিল তিন হাজারেও বেশি। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল ক্ষতায় আসার পর থেকে ফিলিস্তিনের ওপর নিরলস ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। যাকে ইন্তিফাদা বলে অভিহিত করা হয়। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে দুটি ইন্তিফাদার আবির্ভাব হয়। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হয়। যেটি ছয় বছর ধরে চলতে থাকে। এতে প্রায় ৪০০ ইসরাইলি এবং এক হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল। দ্বিতীয়টি শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। স্থায়ী ছিল পাঁচ বছর। এতে তিন হাজার ফিলিস্তিনি ও এক হাজার ইসরাইলি নিহত হয়েছিল। 

বর্তমান সময়েও ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া তার বর্বরতার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন। যার ফলে বেশি সংখ্যক ফিলিস্তিন নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, নিহতদের মধ্যে প্রায় ৫০০ জন চলতি সপ্তাহের শুরুতে আল-আহলি হাসপাতালে রক্তাক্ত অবস্থায় মারা গেছে। এক মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে অন্তত ৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ২০০৫ সালের পর থেকে চলতি সপ্তাহকে এই অঞ্চলের সবচেয়ে মারাত্মক সপ্তাহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৫ সাল থেকে, এই বছর, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইতোমধ্যে সহিংসতার সবচেয়ে ভয়ানক বৃদ্ধি দেখেছে। ২০২৩ সালকে অধিকৃত অঞ্চলে শিশুদের জন্য সবচেয়ে সর্বনাশা বছর বলেও জানা গেছে।

চলমান যুদ্ধ ফিলিস্তিনের অবস্থাকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। ফিলিস্তিনি প্রবাসী শাদি আলী (৪০) বলেছেন, “পরিস্থিতি নজিরবিহীন। গাজায় ইসরাইল যা করছে- ধ্বংস, মৃত্যু এবং বিধিনিষেধ, তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, একটি ‘গণহত্যা’। তাদের ক্রিয়াকলাপ আরও মৃত্যু ও ধ্বংস ডেকে আনছে।” গাজাকে প্রায়ই বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত  কারাগার হিসাবে বর্ণনা করা হয়। যার জনসংখ্যা ২০০৭ সাল থেকে ইসরাইল আরোপিত অবরোধের মধ্যে বাস করে আসছে। একই অবরোধের দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এখনো। ৭ অক্টোবরের পর, ইসরাইল গাজার ২.৩ মিলিয়ন মানুষের পানি, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে সম্মিলিত শাস্তির আওতায় পড়েছে পুরো গাজা উপত্যকা। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ইতোমধ্যেই ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেছেন, কোনো কিছুই ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মিলিত শাস্তিকে সমর্থন করে না। এ পরিস্থিতিতেই ইসরাইল ধ্বংসযজ্ঞ বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বারবার। বিমান হামলাগুলো রাফাহ ক্রসিংয়ের (মিসর ও গাজার মধ্যে একমাত্র সীমান্ত পারাপার পয়েন্ট) আশপাশের এলাকাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। ইসরাইলের শহর তেল আবিব সিরিয়ার কমপক্ষে দুটি বিমানবন্দরে বিমান হামলা চালিয়েছে। সহিংসতা অস্থিতিশীল অঞ্চলের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। হামাসে হামলার পর সিরিয়ায় লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও ইসরাইলি বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও যুদ্ধনীতি মানছে না ইসরাইল। হাসপাতালে হামলা চালিয়েও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকে হাইলাইট করে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের ফলে খাদ্য, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবরাহের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার ফলে গাজায় আরও বেশি মানুষ মারা যেতে পারে।