অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ‘প্রত্যাশিত’ অনুকূল পরিবেশ এখনও তৈরি না হলেও তপশিল ঘোষণার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন ঘিরে সহিংস পরিস্থিতি ঘটবে– এটা ধরেই ভোটের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে ইসি।
আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করার কথা বলে আসছে স্বাধীন এই স্ংস্থাটি। নির্বাচনের তপশিল কবে ঘোষণা করা হবে, তা চূড়ান্ত করা হয়নি। তপশিল ঘোষণার কত দিনের মধ্যে কোন কাজটি করা হবে, তা ঠিক করা হয়েছে।
ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের যারা প্রশিক্ষণ দেবেন, সেসব প্রশিক্ষকের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সফটওয়্যারের কাজ শেষ করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আদেশ জারি করা হবে। মনোনয়নপত্র দাখিল (বিশেষ করে মনোনয়নপত্র দখিলের শেষ সময়ের আগের দুই দিন) ও মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় প্রার্থীদের মহড়া (শোডাউন), প্রার্থীদের আচরণবিধি ভঙ্গের মতো বিষয়গুলো মূলত দেখভাল করবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভা করবে ইসি। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই এ ধরনের সভা করা হয়। সেখানে মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটি মূল্যায়ন করা হয়। ভোটের আগে আগে এ ধরনের আরেকটি সভা করারও পরিকল্পনা আছে ইসির।
ইসি নিজেরাই বলছে, নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেটি এখনও হয়ে ওঠেনি। বিরোধপূর্ণ বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংকটের নিরসন হচ্ছে না জানিয়ে সাংবিধানিক সংস্থাটি বলছে, এ ক্ষেত্রে তাদের করণীয় কিছু নেই।
অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারকে বলতে পারে নির্বাচন কমিশন। এমনকি তপশিল দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সাংবিধানিক ম্যান্ডেট নেই ইসির। তবে ইসি বলছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তপশিল দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি তাদের নিতেই হবে।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সহিংসতার আশঙ্কায় ইতোমধ্যে ইসির পক্ষ থেকে সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। এবার ভিন্ন চিন্তা করছে ইসি। এবার তারা আগামী নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে সক্রিয় ভূমিকায় রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। মূলত নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার আশঙ্কা থেকেই এমন পরিকল্পনা করছে ইসি।