১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির সবচেয়ে বড় শোকের দিন। ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। এই দিনটিকে দল-মত নির্বিশেষে সকলেই শোকের দিবস হিসেবে পালন করে শুধুমাত্র বিএনপি এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত জামায়াত ছাড়া। কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের পর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন, তাদেরকে দেশ ত্যাগের সহায়তা করেছিলেন, তাদের কারণেই এই খুনিরা কূটনৈতিক চাকরি পেয়েছিল এবং জিয়াউর রহমান ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে তাদের বিচারের পথ বন্ধ করে রেখেছিলেন। জিয়ার মৃত্যুর পর এরশাদ ও এই খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া অব্যাহত রেখেছিলেন এবং খালেদা জিয়া এসে এই খুনিদেরকে শুধু কূটনৈতিক চাকরিতে পদোন্নতি দেননি তিনি এদেরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করেছিলেন। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে এদেরকে সংসদে নিয়ে এসে সংসদের পবিত্রতাও নষ্ট করেছিলেন।
বিএনপির রাজনীতি যে ১৫ই আগস্টের ফসল একটা প্রমাণের জন্যই বিএনপি ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করে না। আগে ঘটা করে খালেদা জিয়ার বানোয়াট জন্মদিন পালন করা হতো। অবশ্য তীব্র জনমতের কারণে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জন্মদিনের উৎসব পালন থেকে এখন বিএনপি দূরে সরে এসেছে। এখন ১৫ আগস্টে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করা হয় না। গত ১২ বছরে অনেকের মধ্যে বিশেষ করে যারা তরুণ প্রজন্মের যারা বিএনপি তাদের মধ্যে একটা বোধোদয় ঘটেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন যে ১৫ আগস্ট নিয়ে বিভক্তির রাজনীতি করা বিএনপির উচিত না। তারা মনে করেন যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকলের জাতির পিতা এবং জাতির পিতাকে যথাযথ সম্মান না দিলে তরুণ প্রজন্মের ভোটার এবং জনগণের মধ্যে বিএনপির আস্থা সংকট হবে এবং বিএনপি তার নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত মাঠ জরিপেও এরকম তথ্য পেয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের যারা তারা মনে করেন যে, বিএনপি পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে স্বীকার না করে বরং খুনিদের পক্ষাবলম্বন করে।
এর আগে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন হয়েছিল তখনো বিএনপির নীরবতা তরুণদের কাছ থেকে বিএনপিকে বিচ্ছিন্ন করেছিল এ কারণেই বিএনপির একটি অংশ এখন মনে করেন যে, ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বিএনপির অংশগ্রহণ করা উচিত। ক্ষুদ্র ভাবে হলেও বিএনপি এই দিনটিকে এই দিনটিকে স্মরণ করা উচিত। ইতিমধ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপি একধাপ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছিল। তারা ৭ই মার্চ পালন করেছিল, যেটি বিএনপির রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। অবশ্য এই ৭ই মার্চ পালন নিয়েই বিএনপিদর মধ্যে উত্তাপ হয়েছিল। এখনো বিএনপিতে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদেরই কর্তৃত্ব বেশি। তারপরও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন নেতা ৭ই মার্চ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সেই ধারায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করতে চায় এবং এ নিয়ে বিএনপির তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব হয়েছে। বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেছেন যে, আমরা জনবিচ্ছিন্ন থাকতে পারিনা এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করা একটি রাজনৈতিক দলের কাজ। যেহেতু বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরে সেজন্য আমরা মনে করি যে ১৫ই আগস্ট শোক দিবস পালন করা উচিত। বিশেষ করে বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সহ বেশ কয়েকজন নেতা মনে করেন যে ১৫ই আগস্টে ক্ষুদ্র করে হলেও শোক দিবস পালন করা উচিত এবং বিএনপির এই দায় থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া সহ বেশকিছু প্রবীণ নেতা ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের বিরুদ্ধে। আর এখন দেখার বিষয় যে ৭ মার্চ পালন করে বিএনপি যেভাবে তার অবস্থান থেকে সরে এসে ছিলো সেরকম ভাবে ১৫ই আগস্ট পালনের মধ্য দিয়ে বিএনপি জনগণের অভিমতের সাথে একাত্ম হয় কিনা।