ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

এ সরকারকে আগে পদত্যাগ করতে হবে: মির্জা ফখরুল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | আপডেট: মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৭, ২০২৩

এ সরকারকে আগে পদত্যাগ করতে হবে: মির্জা ফখরুল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংলাপ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের কথা পরিষ্কার-আগে পদত্যাগ করেন; সংসদকে বিলুপ্ত করেন; নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনে আসেন। 

তিনি বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে। আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই। সোমবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘যুব সমাবেশে’ তিনি এসব কথা বলেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল পাঁচটি সুপারিশ করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের প্রধান সুপারিশই হলো সংলাপ। 

আর সংলাপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ‘আমরা তখনই আলোচনায় বসতে রাজি-যখন বিএনপি সব শর্ত বাদ দিয়ে আলোচনায় আসবে’ এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমার প্রশ্ন, আপনারা কি সাংবিধানিকভাবে বৈধ? এটা আপনাদের প্রমাণ করতে হবে। আমি প্রমাণ দিচ্ছি-আপনারা সংবিধানিকভাবে বৈধ নন, অবৈধ। সংবিধান পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছেন। তাই সবার আগে আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) পদত্যাগ করতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে যে বলছেন নির্বাচন সংবিধানের ভিত্তিতে হতেই হবে। তাহলে সবার আগে পদত্যাগ করেন। কারণ আপনি অবৈধভাবে আছেন। সেই কারণে ভূতের মুখে রাম নাম শোভা পায় না। জনগণকে প্রতারণা করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছেন। আমাদের কথা পরিষ্কার, আগে পদত্যাগ করেন।

দলীয় নেতাকর্মীদের ‘সর্বাত্মক’ প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে। আর পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই। 

যুবদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন ‘ভোট চোর, ভোট চোর শ্লোগান’ আছে। এর সঙ্গে আরেকটা স্লোগান দিতে হবে ‘সরকার অবৈধ, সংবিধান চোর’। সুতরাং তাদের কোনো ক্ষমা নেই। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনি পর্যবেক্ষক টিম প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, দলটি কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনো প্রতিনিধি দল নয়। এটি হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বাধীন। বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিস্থিতি আছে কি না তা দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট পার্টির থিংক ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছে। নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বড় কোনো টিম পাঠাবে কি না এটা দেখা। এই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, সম্পাদক, নির্বাচন কমিশন, সরকারের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। তারা একটা বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা পাঁচটি সুপারিশ করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশে করে মির্জা ফখরুল বলেন, অবৈধভাবে আপনারা ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন। বিচারপতি খায়রুল হক একটা ছোট রায় দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন-এটা প্রাসঙ্গিক নয়, সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আরও দুইটা নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। শর্ত ছিল বিচারককে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রাখা যাবে না। সেই ছোট রায় ১৬ মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায় হিসাব বেরিয়েছিল। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় দেওয়ার আগেই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করেছিল। আর এখন বলছে, সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে। তাহলে সবার আগে আপনাকে (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করতে হবে। কারণ আপনারা অবৈধ। 

তিনি বলেন, সোজা কথা-আমরা জীবন দিয়ে লড়াই করছি; অনেক কিছু হারিয়েছি। অনেক ভাই প্রাণ দিয়েছেন; রক্ত দিয়েছেন। অনেক মা সন্তান হারা হয়েছেন। অনেক সন্তান পিতৃহারা হয়েছে। আমাদের পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সময় নেই।

যুবদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকারের প্রতি একটি বার্তা-তোমার আর সময় নেই। যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল সবাই একযোগে তোমাদের বিরুদ্ধে নেমেছে। আমাদের সঙ্গে এদেশের জনগণ আছে। আন্দোলন কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে। 

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কিভাবে কথা বলেছেন-দেশের মানুষ ধিক্কার জানিয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকে দেশে আসতে দিচ্ছেন না। ৪২-৪৩ লাখ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা যদি ঢাকার দিকে আসতে থাকে এ বিচার ব্যবস্থার খোঁজখবর থাকবে? প্রয়োজন পড়লে এ ৪২-৪৩ লাখ লোককে ঢাকার দিকে ধাবিত করব। এ সরকারের তখতে তাউস আমরা ভেঙে চুরমার করে দেব।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ওরা বলে তলে তলে সব কিছু হয়ে গেছে। তলে তলে কিছুই হয়নি। আমরা গণতন্ত্র ফেরানোর যুদ্ধে আছি। বিএনপি একটি পরিবার। আমাদের এক পরিবার হয়ে কাজ করতে হবে, একসঙ্গে রাস্তায় নামতে হবে। ওরা (পুলিশ) যদি গেরিলা কায়দায় আমাদের ওপর হামলা চালায়, আমরাও বিনা কারণে আর ছাড় দেব না। কারণ সংবিধান বলেনি-এ সরকারকে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন করার। এভাবে আর চলতে দেওয়া হবে না।

জাতীয়তাবাদী যুব দলের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোসহ সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে হাজারো যুবক মাথায় লাল-সবুজ টুপি পড়ে অংশ নেন। অনেক নেতা-কর্মী সাদা কাফনের কাপড় মাথা বেঁধে সমাবেশে বসে থাকতে দেখা যায়।

যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ। 

বক্তব্য দেন যুবদলের মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, রুহুল আমিন আকিল, জাকির হোসেন সিদ্দিকী, জাকির হোসেন নান্নু, তরিকুল ইসলাম বনি, মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, ইমান হাসান, মাহবুব হাসান ভুঁইয়া পিংকু, গোলাম মোস্তফা সাগর, আনোয়ারুল হক রয়েল, কামাল আনোয়ার আহমেদ, জিয়াউর রহমান জিয়া, সাইদুর রহমান, ইসহাক সরকার, ঢাকা মহানগরের খন্দকার এনামুল হক ও শরীফ উদ্দিন জুয়েল, যুবদলের সাইদুল ইসলাম সেন্টু, লিটন মোল্লা, সাজিদ হোসেন বাবু, শামীম প্রমুখ।