ইসরাইলের শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। গোপন অভিযান ও সন্ত্রাসবাদ দমনে কাজ করে সংস্থাটি। সেইসঙ্গে ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইসরাইলে আকস্মিক হামলা করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
ইসরাইলের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এটা কীভাবে ঘটল, আমরা ভাবতেও পারছি না।
এত নিরাপত্তা ও নজরদারি ভেদ করে ইসরাইল কেন হামাসের হামলার বিষয়ে আগাম আঁচ করতে পারল না, সেই প্রশ্ন অনেকের মনে।
শনিবার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ছয়টা। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে একের পর এক রকেট হামলা শুরু হয় ইসরাইলে। সীমান্ত পার হয়ে ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েন হামাস যোদ্ধারা। কিন্তু এমন হামলা হতে পারে, তার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না ইসরাইলি বাহিনীর।
ইসরাইলিদের কাছে এটা খুবই অবাক করার মতো বিষয়। আবার হতে পারে, গোয়েন্দাদের কেউ কেউ হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য পেলেও সেই অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
বলা হয়ে থাকে, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সক্রিয় ও চৌকস গোয়েন্দা সংস্থা হচ্ছে ইসরাইলের। অঞ্চলটিতে গোয়েন্দাদের পেছনে ইসরাইলের মতো এত বেশি অর্থ অন্য কোনো দেশ ব্যয় করে না। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী, লেবানন, সিরিয়া ছাড়াও অন্যত্র তাদের গুপ্তচর ও তথ্যদাতা আছে।
অতীতে দেখা গেছে, ইসরাইলি গোয়েন্দাদের হাতে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা। এসব নেতা কখন কোথায় যেতেন, কোথায় থাকতেন, তার সব তথ্যই থাকত তাদের কাছে। সব তথ্য জেনে সুবিধামতো সময় ও জায়গায় চোরাগোপ্তা হামলায় তাদের হত্যা করা হতো।
ইসরাইলি গোয়েন্দা কখনো এসব গুপ্তহত্যা চালাত নির্দিষ্ট অবস্থান নিশানা করে ড্রোন হামলা চালিয়ে, কখনো নিশানা করা ব্যক্তির গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকার লাগিয়ে তাকে শনাক্ত করে। এমনও হয়েছে, ফোনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বা বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিশানা করা ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে।
ইসরাইলের গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ হামলার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করতে হয়েছে হামাসকে। ইসরাইলের গোয়েন্দা তৎপরতা সম্পর্কে অন্য অনেকের চেয়ে ভালো জানে ফিলিস্তিনি এই সংগঠন। ফলে এই হামলার বিষয়টি যাতে ফাঁস না হয়, সে জন্য নানাভাবে ইসরাইলি গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিতে হয়েছে এবং তাদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে হয়েছে।
ইসরাইলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাসের এ হামলা নিয়ে গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বড় ধরনের একটি তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এ তদন্ত শেষ করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।