নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, নভেম্বর ২১, ২০২১
শুক্রবার
অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকগুলো বার্তা দিয়েছেন দলের নেতাকর্মীদেরকে। প্রশ্ন হলো,
আওয়ামী লীগ সভাপতির এ বার্তা কি অনুধাবন করতে পেরেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা? যদি
অনুধাবন করতে পারে তাহলে আওয়ামী লীগের এই বার্তা থেকে হয়তো আওয়ামী লীগ অনেক কিছু
শিখবে এবং এই বার্তাগুলো অনুধাবন করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেক পরিবর্তন হবে।
আর শেখ হাসিনার বার্তা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পড়তে না পারে তাহলে ভবিষ্যতে আরও
কঠোর ব্যবস্থা তিনি হয়তো গ্রহণ করতে পারেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি গতকালের বৈঠকে কি বার্তা
দিলেন?
দলে কেউ অপরিহার্য নয়: শেখ হাসিনা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন,
যেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সিটি কর্পোরেশন। সেই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে দল থেকে
বহিষ্কার করে প্রমাণ করে দিলেন যে কেউ অপরিহার্য নয়, কেউ বাড়াবাড়ি করলে, নীতি আদর্শের
পরিপন্থী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি মোটেও কার্পণ্য করেন না। জাহাঙ্গীর
গাজীপুরের নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন এবং আজমত উল্লাহর মতো জনপ্রিয়, ত্যাগী এবং
দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকে বাদ দিয়ে তাকে মেয়র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মেয়র হয়েই
জাহাঙ্গীর মনে করেছিলেন যে, তিনি বোধহয় দলের সর্বেসর্বা এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু
শেখ হাসিনা পরিষ্কার করে দিলেন যে, দলের জন্য কেউই অপরিহার্য নয় এবং একজন নেতা যতই
জনপ্রিয় হোক না কেন, তিনি যদি দলের আদর্শের বাইরে, বঙ্গবন্ধুর নীতির বাইরে যান তাহলে
তার করুণ পরিণতি হতে বাধ্য। আর এই বার্তাটি সকলের জন্য প্রযোজ্য। যারা এখন মন্ত্রী-এমপি
হয়ে দলের ভেতর সৃষ্টি করছেন, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার
নির্বাচন গুলোতে বিভক্তি আনছেন তাদের জন্য এটি একটি কঠিন বার্তা। এই বার্তার প্রয়োগ
যে ভবিষ্যতে কঠিনভাবে হবে এটি নিয়ে কোনো সংশয় এবং সন্দেহ নেই।
ধৈর্য ধরলে মূল্যায়ন করা
হয়: আওয়ামী লীগ সভাপতি
গতকালের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করলেন। তা হলো,
যদি কোন ব্যক্তি ধৈর্য ধরে, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করা ব্যক্তিকে যদি সাময়িকভাবে
মূল্যায়ন না করা হয়, তাহলে তার কষ্ট পাওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ, শেখ হাসিনার সবকিছু
জানেন এবং দেখেন। নির্দিষ্ট সময়ে তিনি তাকে মূল্যায়ন করবেন। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের
পরীক্ষিত নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনার পাশে
দাঁড়ানো অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং জাতীয় চার নেতার উত্তরাধিকার এএইচএম খায়রুজ্জামান
লিটন যেভাবে শেখ হাসিনা প্রেসিডিয়াম সদস্য করলেন তা সকলের জন্য একটি শিক্ষা বটে। শিক্ষা
হলো যে, আওয়ামী লীগের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেন শেখ হাসিনা সবসময় তাদের পাশে
থাকেন এবং কোন না কোন সময় তাদেরকে মূল্যায়ন করেন। কাজেই, আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও
পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের হতাশ হবার কোন কারণ নাই। শেখ হাসিনা যতক্ষণ আছেন, ততক্ষণ তাদেরকে
নিঃসন্দেহে মূল্যায়ন করা হবে আজ অথবা কাল।
কোন্দল-অনিয়ম বরদাস্ত
করা হবে না: আওয়ামী
লীগ সভাপতি গতকালের বৈঠকে সুস্পষ্টভাবে বার্তা দিলেন যে, আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল
এবং অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। দলের উপর কেউ নেই। দলে থেকে যারা কোন্দল করবেন তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি কার্পণ্য করবেন না।
আর
এই তিন বার্তা আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সময়ে যে অস্থিরতা তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আওয়ামী লীগ সভাপতির এই বার্তাগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি যে ব্যক্তির চেয়ে দল বড় মনে
করেন সেটি প্রমাণ করলেন। এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার বার্তাটা যদি বুঝতে পারেন
তাহলে নিশ্চয়ই কোন্দল থেকে বেরিয়ে এসে দলের জন্য আত্মনিয়োগ করবেন।