স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বিদেশি আগ্রাসন ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে সংবিধান অনযায়ী যথাসময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আজ ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও বিদেশি আগ্রাসন প্রতিরোধ আন্দোলন। সংগঠনের সমন্বয়ক আল মামুন এর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচীতে আরোও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সুজন, ইঞ্জি: কামরুজ্জামান রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জি: নুরুল আমিন পাপুল, সহ-সম্পাদক মুবিয়া হাসান চৌধুরী নিয়াত, সংগঠনের দপ্তর সমন্বয়ক মুহাম্মদ নূর আলম সরদারসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সমন্বয়ক আল মামুন বলেন, "স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বিদেশি আগ্রাসন ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে আমেরিকা প্রতিনিয়ত কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত হস্তক্ষেপ করছে যা এদেশের জনগণ কখনোই মেনে নিবে না। একাত্তর সালে আমেরিকা আমাদের স্বাধীনতা ও বিজয় ঠেকাতে পারেনি, এবারও পারবে না। ভিসানীতির ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আবারও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির জয় হবেই। আমেরিকার কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বিবৃতিসহ বিএনপি-জামাতের পেইড এজেন্ট অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ড. ইউনুসের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও বিদেশি আগ্রাসন প্রতিরোধ আন্দোলন। প্রশ্নবিদ্ধ ও তথাকথিত সংগঠন অধিকারের আদিলুর রহমানকে নিয়ে এসব ভুয়া আন্তর্জাতিক সংস্থার মন্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর সুস্পষ্ট নগ্ন হস্তক্ষেপ যা কখনোই এদেশের জনগণ মেনে নিবে না। হেফাজত আন্দোলনে মৃত্যু সংখ্যা বিষয়ে মিথ্যা, ভুল ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরী করে বিশ্বের নিকট দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে আদিলুর রহমান সুস্পষ্ট ভাবে দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কোন ধরনের যাচাই-বাছাই না করে কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন আদিলুর রহমানের পক্ষে সাফাই গেয়েছে যা কখনোই কাম্য নয়। বিএনপি-জামাতের পেইড এজেন্ট হিসেবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একের পর এক গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালীন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধেও এসব তথাকথিত ভুইফোড় সংগঠন অপপ্রচার চালিয়েছিল। গুজব সন্ত্রাসের জনক আদিলুরের পক্ষে আমেরিকান দূতাবাসের বিবৃতি এদেশের জনগণকে ব্যথিত করেছে। আমেরিকাসহ প্রতিটি বিদেশি রাষ্ট্রের নিকট আমরা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে মন্তব্য প্রত্যাশা করি। দেশের প্রচলিত সংবিধান অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন বদ্ধ পরিকর। বর্তমান সরকার এব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচালের জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র শুরু করেছে যা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘ, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিকট আমরা নিরপেক্ষ আচরণ প্রত্যাশা করি। যারা আসন্ন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করার চেষ্টা করছে তাদের বিষয়ে আমেরিকাসহ বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নীরবতা এদেশের জনগণ কখনোই মেনে নিবে না। কারণ ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও বিএনপি-জামাত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করছিল। আন্দোলনের নামে হাজার নিরীহ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আবার বিএনপি-জামাত তাদের পুরনো চেহারায় ফিরে গিয়েছে। এরা গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার নষ্ট করে পিছনের দরজা দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসতে চায় যা এদেশের জনগণ কখনোই মেনে নিবে না। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলেই দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, ড. ইউনুস ও আদিলুর ইস্যুতে আমেরিকার সাম্প্রতিক ভূমিকা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম হুমকি যা এদেশের কোন দেশপ্রেমিক নাগরিক মেনে নিবে না। বাংলাদেশের মানুষ তারা নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিবে। কেউ অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কোন বিদেশি রাষ্ট্র অন্য দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর দলীয় বিবেচনায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল আদিলুর রহমান খানকে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি বিএনপি-জামায়াত জোটের একটা বিশেষায়িত কৌশলি উইং হিসেবে কাজ করে আদিলুরের মানবাধিকার। আদিলুরের মূল কাজ ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ইমেজ খারাপ করা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের হয়ে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়াতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন আদিলুর ও তার সংস্থা 'অধিকার'। তিনি ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পুলিশের অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিলেন। স্বাধীন দেশে কে জেলে যাবে, কে যাবে না তা বিদেশিরা নির্ধারণ করতে পারেনা।"
ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, "আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে বিএনপি-জামাত গুজব ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটের চেষ্টা করছে। আমেরিকার নিকট আমরা নিরপেক্ষ আচরণ প্রত্যাশা করি। যেই আদিলুর রহমান ২০১৩ সালে হেফাজতের তাণ্ডবের পর মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশে দাঙ্গা আরম্ভ করেছিল সেই অধিকার ও আদিলুরের জন্য আমেরিকান এমব্যাসির এই প্রেস রিলিজ ও টুইট প্রমাণ করে তারা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। ৫ মে'র তাণ্ডবের সাথে আদিলুরের সম্পর্ক ইতিমধ্যে জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। স্বাধীন দেশে আমেরিকান দূতাবাসের এই অযাতিত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। চোখে টিনের চশমা থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দোষ দেখেনা। অনেকেই রয়েছেন যারা মানবাধিকারের পক্ষে বিবৃতি প্রদানে অত্যন্ত সোচ্চার, তথাপি নিজেরা মানবাধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অপারগ। মানবাধিকার ইস্যুটি রাষ্ট্র এবং দেশ বিশেষে ভিন্নতর হয়ে থাকে। সুইডেনের নাগরিকের মানবাধিকার আর আফগানিস্তানের নাগরিকদের মানবাধিকার তাদের নিকট এক নয়। আমেরিকায় বাচ্চাদের স্কুলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে- এটি নিশ্চিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। কেননা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর নিরাপদ পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কিছুদিন আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক নাগরিককে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ বাহিনী। দেশটিতে বর্ণবৈষম্য ব্যাপকভাবে বিদ্যমান এখনো, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কালো রঙের নাগরিকদের শোষণ ও অত্যাচার করা হয়ে থাকে। কোনো সভ্য দেশে গায়ের রঙের ভিত্তিতে মানুষের মূল্যায়ন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, এটি বর্বরতার শামিল।মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটের এক গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৮০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি সহিংসতায় ৩০ হাজার ৮০০ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।অধিকাংশ মৃত্যুর খবর দেশটির সরকারি নথিতে উঠে আসেনি। এদিকে ২০২৩ সালের প্রথম কয়েক দিনে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এলএপিডি) হাতে তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ৪৫ বছর বয়সী স্মিথ, অ্যান্ডারসন আর ৩৫ বছর বয়সী অস্কার সানচেজ। তিনটি ঘটনার বডি ক্যামেরা ফুটেজ প্রকাশ করে এলএপিডি প্রধান মিশেল মুর বলেছেন, এসব মৃত্যুর ঘটনায় তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে অ-হিস্পানিক কৃষ্ণাঙ্গ (আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ) জনগোষ্ঠীর ওপর পুলিশি সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি। দেশটি প্রত্যেক বছর মানবাধিকারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, বিভিন্ন দেশের ওপর তাদের মন্তব্য প্রকাশ করে কিন্তু নিজ দেশের ব্যাপারে তাদের মধ্যে উদাসীনতা সুস্পষ্ট। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস থেকে তাদের দেশের মানবাধিকারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা, তাহলে পুরো পৃথিবীর মানুষ উক্ত দেশের মানবাধিকারের চিত্র সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। আমেরিকায় বিগত নির্বাচনে বিশ্ববাসী তাদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা অবলোকন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিজ দেশের মানবাধিকার নাই, এরা আবার মানবাধিকারের সততার বুলি উড়ায় বিশ্বে। ড. ইউনুসের ক্ষেত্রে মানবাধিকার দেখা যায় কিন্তু প্রাপ্য মজুরী বঞ্চিত শ্রমিক ও বিএনপি-জামাতের আগুন সন্ত্রাসে নিহত পরিবারদের প্রতি হিলারি ক্লিনটন গংদের মানবাধিকার দেখা যায় না।"
ইঞ্জি: কামরুজ্জামান রাজু বলেন, "সম্প্রতি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন দেশের কতিপয় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খোলা চিঠি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এধরণের খোলা চিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের উপর স্পষ্ট হুমকি হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ওপর এধরণের ন্যাক্কারজনক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়, সেই চিঠিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত চলমান মামলাসমূহের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে যা একটি স্বাধীন দেশের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও দেশের বিবেকবান সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর এধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। কারণ উল্লিখিত খোলা চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধান সুস্পষ্ট ভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(৪) অনুযায়ী বিচারকগণ তাদের বিচারিক কাজে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত কারোরই বিচার প্রক্রিয়ার হস্তক্ষেপ কোন এখতিয়ার নেই। উল্লিখিত চিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধান আন্তর্জাতিক সংস্থা (ILO) স্বীকৃত শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এই চিঠিতে 'নিরপেক্ষ' বিচারকের মাধ্যমে ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ বিচারের আহ্বান জানানো হয়েছে, তা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করার সামিল বলে আমরা মনে করি। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকই আইনের দৃষ্টিতে সমান। কেউ আইনের উর্ধে নন। ৩০ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই সংবিধানে সকলেরই আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে অনেক নোবেল বিজয়ী অপরাধ করার পর সেই দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তি পেয়েছেন। নোবেল বিজয়ীরা অপরাধ করলেও শাস্তি পাবেন না এধরনের দায়মুক্তি বিশ্বের কোথাও নেই।"
ইঞ্জি: নুরুল আমিন পাপুল বলেন, "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারকার্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ও স্বাধীনভাবে সম্পূর্ণ হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে বিচারিক হেনস্তা'র অভিযোগ অমূলক ও অনভিপ্রেত। পাশাপাশি ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে সব সময়ই দেশে ও বিদেশে ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। প্রেরিত খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গের নিজ নিজ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আমরা প্রত্যাশা করি, বিবৃতিদাতাগণ তাদের নিজ নিজ দেশের মতো বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকেও নিজস্ব আইন অনুযায়ী চলার সুযোগ দিবেন এবং সম্মান করবেন।
নোবেলজয়ীসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে তারই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীর দায়ের করা মামলার কার্যক্রম স্থগিতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে আহ্বান জানিয়েছেন সেটি সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক ও অগ্রহণযোগ্য। এটি একটি দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। এটি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিনা- তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে তারা ‘এধরনের বেআইনি এবং অনভিপ্রেত বক্তব্যের বিরুদ্ধে আবারো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১৬৮টি মামলায় আইনের কোন কোন ধারা লঙ্ঘন করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাকে অন্যায়ভাবে অপদস্থ করছেন সেটা বিবৃতিদাতাদেরকে বিশ্ববাসীর নিকট স্পষ্ট করার দাবি জানাচ্ছি। তারা তা করতে ব্যর্থ হলে ধরে নিতে হবে যে, বিবৃতিদাতারা প্রকৃত সত্য না জেনে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত হয়ে এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। দেশ ও জাতির ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে ড. ইউনুসের রাষ্ট্রবিরোধী সকল ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ১৬০ জনের এধরণের বিবৃতির সঙ্গে বাংলাদেশ বিরোধী কোনো ষড়যন্ত্র যুক্ত রয়েছে কিনা- তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি। কারণ এর আগেও বিশ্বব্যাংককে ভুল তথ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে ড. ইউনুস রাষ্ট্র বিরোধী অপরাধ করেছিলেন। সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টির মাধ্যমে মাইনাস টু ফর্মুলা কার্যকর করে অগণতান্ত্রিক পন্থায় তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন। আবারও তিনি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। তথাকথিত পশ্চিমা প্রেসক্রিপশন মাইক্রো ক্রেডিটের নামে চড়া সুদে চক্রবৃদ্ধি ঋণের জালে ফেলে গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া অর্থ লুটপাট করে ড. ইউনুস বাংলাদেশের সাথে বেঈমানী করেছেন। ড. ইউনুসের চড়া ঋণের ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যা করা নারী রেখা রাণীর কথা বাঙ্গালি জাতি এখনো ভুলে যায়নি। জনগণের ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করে বিদেশি পেইড এজেন্টদেরকে দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। কারণ সে প্রতিনিয়ত দেশ ও জনগণের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছেন যা বন্ধ করতে হবে।"
ফিরোজ আহমেদ সুজন বলেন,
"স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাতের নেতাদের সাথে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সকল ধরনের গোপন বৈঠক দেশের প্রচলিত আইন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের চরম লঙ্ঘন যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র করার অপরাধে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ড. ইউনুসকে অবিলম্ব বাংলাদেশের জনগণের নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোকে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখতে হবে। অন্যথায় সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও বিদেশি আগ্রাসন প্রতিরোধ আন্দোলন খুব শীঘ্রই এদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।"