ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

লিবিয়ার ডেরনা এখন লাশের শহর

বিশ্ব বাংলা ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩

লিবিয়ার ডেরনা এখন লাশের শহর
ঘূর্ণিঝড় ‘ড্যানিয়েলের’ ভয়াবহ তাণ্ডবে লিবিয়া এখন মৃত্যুপুরী। পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ বন্দর শহর ডেরনায়। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, সমুদ্র যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাশ। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫০০। আহত সাত হাজার, নিখোঁজ আরও ১০ হাজার মানুষ। গৃহহীনের সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজার।  

ডেরনা শহরে মেয়র আবদুল মেনাম আল গাইথি অবশ্য আগের দিনই বলেছিলেন মৃতের আনুমানিক সংখ্যা ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার হতে পারে।

ভারি বৃষ্টিপাত, পানির উচ্চপ্রবাহ, শক্তিশালী বাতাসে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে উপকূলীয় শহর ডেরনা। আকস্মিক বন্যায় দুর্ভোগের মাত্রা যোগ করেছে শহরটির গুরুত্বপূর্ণ দুটি বাঁধ। 

আল-বিলাদ ও আবু মনসুর নামক বাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ায় ৩০ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি ছড়িয়ে পড়ে। শহরের পানি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টির চাপে ডেরনার ১২ কিমি. দূরে উপরের বাঁধটি আগে ভেঙে পড়ে। 

সব পানি ডেরনা থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরেকটি ছোট বাঁধে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে সেটিও ভেঙে পড়ে। চোখের পলকেই শহরটির বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। গত কয়েক দিনের চেয়ে পরিস্থিতি আরও অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। এপি, এএফপি, আলজাজিরা, সিএনএন। 

আকস্মিক এ দুর্যোগের আভাস পাননি অনেকেই। ঘুমন্ত মানুষজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। দেশটির রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, মর্গগুলোতে হাঁটলেই চোখে পড়ছে লাশের স্তূপ। উপায়ন্তর না পেয়ে ব্যবস্থা করা হচ্ছে গণকবরের। 

বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে প্রায় তিন হাজার লাশ গণকবর দেওয়া হয়। মৃতের সংখ্যা কমাতে জোর অভিযান চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দলগুলো। শহরের কেন্দ্রস্থলে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিল্ডিংগুলো, উলটে যাওয়া গাড়ি, কংক্রিটের নিচে চাপা পড়া ধ্বংসাবশেষ সর্বত্রই চলছে জীবনের খোঁজ। 

ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী মরদেহগুলোকে তিন দিনের মধ্যে দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী অদেল জুমা বলেন, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য, শরিয়া এবং আইন অনুযায়ী দাফন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করার জন্য উদ্ধার কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ 

এদিকে বন্যাবিধ্বস্ত লিবিয়ায় উদ্ধারকর্মীরা ‘বডি ব্যাগের’ জন্য আবেদন করছেন। ডেরনার মেয়র আবদুল মেনাম আল-গাইথি বলেছেন, ‘আসলে আমাদের মৃতদেহ উদ্ধারে বিশেষ দল দরকার। ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং পানিতে প্রচুর সংখ্যক মৃতদেহ পড়ে থাকার কারণে শহরটি মহামারীতে আক্রান্ত হবে বলে আমি আশঙ্কা করছি। 

অনুসন্ধান দলের পরিচালক লুৎফি জানান, ‘আমাদের লাশের জন্য এখন ব্যাগ দরকার।’ ইতোমধ্যেই দেশটিতে আন্তর্জাতিক সাহায্য আসতে শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের কল্যাণ তহবিল থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ডেরনার পশ্চিমে  বেনগাজিতে এই সপ্তাহে প্রতিবেশী মিসর, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, ইতালি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে উদ্ধারকারী দলও সাহায্য পাঠিয়েছে। 

যুক্তরাজ্য এবং জার্মান সরকার কম্বল, স্লিপিং ব্যাগ, ম্যাট, তাঁবু, পানির ফিল্টার এবং জেনারেটরসহ সরবরাহ পাঠিয়েছে। 

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ত্রাণ সংস্থাগুলোতে অর্থ পাঠাবে এবং অতিরিক্ত সহায়তা লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয় করে পাঠাবেন।’