মরক্কোতে ভূমিকম্পের ৫ দিন গড়িয়েছে। শুক্রবার রাতের ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির রাস্তাঘাট, শহুরের বসতিসহ গ্রামের পর গ্রাম। ভয়ংকর ওই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯০১ জন। আহত ৫ হাজার ৫৩০। জাতিসংঘের হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই শিশু। ভূমিকম্পের পরপরই পুরোদমে শুরু হয়েছে উদ্ধার কার্যক্রম। চলছে এখনো। তবে দিন যাচ্ছে আর কমছে জীবনের আশা। জীবিত উদ্ধারের আশায় ভাঙা কাদা-ইটের বাড়ির ধ্বংস্তূপ খুঁড়ে খুঁড়ে দেখছেন দেশ ও দেশের বাইরের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল। এপি, এএফপি
সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো কাজ করছে আফটারশকের ভয়। কম্বল জড়িয়ে খোলা মাঠে, রাস্তার ধারে, ফুটপাতের তাঁবুতে ঘুমাচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। পুরোপুরি অথবা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি থেকে দূরে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন মধ্য মরক্কোর প্রধান শহর মারাকেশের বাসিন্দারা।
ভূমিকম্পে পরিবারের নয়জনকে হারানো হোসাইন বেনহামউ (৬১) বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থানান্তরিত হতে চাই। আমরা সবকিছু হারিয়েছি। এমনকি আমাদের গবাদিপশুও, কিন্তু কেউ আমাদের দেখতে আসেনি।’ তবে মরক্কোর এমএপি নিউজ এজেন্সি জানায়, ভূমিকম্পে আহতের পরিদর্শনে মারাকেশ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে গেছেন দেশটির রাজা মোহাম্মদ ষষ্ঠ। আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। এ সময় দেশবাসীকে রক্তদানে উৎসাহিত করতে রক্ত দেন নিজেও।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে ত্রাণসহায়তা। এগিয়ে আসছেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী। ছোট ছোট দলে ত্রাণ তহবিল সংগ্রহে নেমেছে দেশটির উঠতি বয়সি তরুণ সম্প্রদায়ও।
পানি, আশ্রয়, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন পরিষেবাসহ অন্যান্য চাহিদা মেটাতে ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারেরও বেশি সহায়তার আবেদন করেছে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা রেড ক্রস। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের গ্লোবাল ডিরেক্টর অব অপারেশন্স ক্যারোলিন হল্ট বলেন, ‘দুর্যোগের দ্বিতীয় তরঙ্গ এড়ানো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
ফি কমিয়ে সংহতি উদ্যোগে সহায়তা করতে মরক্কোর হাইওয়ে, বড় সুপারমার্কেট চেইন ও পেট্রোল সরবরাহকারীসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানানো হয়েছে। অনুদান বহনকারী ট্রাকগুলোতে জ্বালানি সংস্থাগুলোকে বিনা মূল্যে পেট্রোল সরবরাহ আর অনুদানের পণ্যতে লাভের পরিমাণ হ্রাসের দাবি জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মী জাকারিয়া বশিকরি বলেন, ‘মরক্কোর মহাসড়কগুলোতে অবশ্যই তাদের রুটের মাধ্যমে বিনা মূল্যে পরিবহণ সরবরাহ করতে হবে। বিশেষত মানবিক সহায়তায় পণ্য পরিবহণ করা ট্রাকগুলোতে।’ জাতীয় ব্যবসা ও উল্লেখযোগ্য শপিং সেন্টারগুলোকে ‘একটি সংহতি পদক্ষেপ হিসাবে তাদের লাভের পরিমাণ কমাতে’ আহ্বান জানিয়েছেন মরোক্কান ইউনিভার্সিটি ফর কনজিউমার রাইটসের সভাপতি বোয়াজ্জা এল খারাতি।
মরক্কান ইউনিভার্সিটি ফর কনজিউমার রাইটসের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এই স্থানগুলো লাভ নির্ধারণ ছাড়াই বা সংহতিতে এর একটি অংশ উৎসর্গ করে পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ করতে পারে। কারণ তাদের অনেক ট্রাক রয়েছে।’