ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের খোলা চিঠির মাধ্যমে একটি স্বাধীন দেশের বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপে প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়(ইবি) শিক্ষক সমিতি।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহা: জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৮ আগামী ২০২০ তারিখে বেশ কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের সম্মানিত সদস্য বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য আত্মজা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন-মর্মে আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবগত হয়েছি। একটি দেশের সরকার প্রধানের কাছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিশিষ্টজনদের এধরণের চিঠি স্বাভাবিক ঘটনা হলেও চিঠির বিষয়বস্তুতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিস্মিত ও হতবাক হয়েছে। চিঠিতে তাঁরা বাংলাদেশের শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর এমন অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকে। কাজেই এধরনের চিঠি প্রদানের মাধ্যমে তাঁরা অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন বলে আমরা মনে করি। আরও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্যণীয় যে, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বার্থরক্ষায় আগ্রহী হলেও ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং শ্রমিকদের মানবাধিকার ও আইনী সুরক্ষার বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থেকেছেন। এধরনের বিবৃতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের প্রদত্ত অধিকার সংক্রান্ত বিধানাবলীর সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাছাড়া একই চিঠিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, তা স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের সামিল।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ এ ধরনের অবমাননাকর, অযাচিত ও বেআইনি হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না। এ-ধরনের বিবৃতির পেছনে গোপন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে অধিকতর সম্মান প্রদর্শনের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।