ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

সেনা কলমে লেখা সংবিধানে থাই গণতন্ত্রের ভাগ্য

বিশ্ব বাংলা ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩

সেনা কলমে লেখা সংবিধানে থাই গণতন্ত্রের ভাগ্য
রাজতন্ত্রের আকাশে গণতন্ত্রের সূর্য দেখবে বলে ১৯৩২ সালেই রাজশাসনের অবসান ঘটায় থাইল্যান্ড। জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজা প্রজাধিপককে উৎখাত করে ২৪ জুন ক্ষমতা হাতে তুলে নেয় সেনাবাহিনীর ছোট কর্মকর্তাদের একটি দল। নাম ‘ফোর মাস্কেটিয়ার’। সেই অভ্যুত্থানের নেতা ছিলেন পিপলস পার্টির পক্ষে কর্নেল ফ্রায়া ফাহল। নতুন সংবিধান তৈরি করে খসড়া পেশ করে রাজার কাছে। 

রাষ্ট্রপরিচালনার নয়া বিধান মোতাবেক সাংবিধানিক রাজা হিসাবে প্রজাধিপক তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। এর পর থেকেই থাই গণতন্ত্রে অংশীদারত্বের ভাগ বসায় সেনাবাহিনী। অস্তাচলে ঢলে পড়ে থাইল্যান্ডের ৭০০ বছরের রাজতন্ত্র।  ডানা মেলে নতুন অসুর সেনাবাহিনী। 

পরবর্তীতেকালে নিজেদের সুবিধা মতো তৈরি করে নতুন সংবিধান। সেনা কলমে লেখা সেই সংবিধানেই ২২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওত্রার ফেউ থাই পার্টির স্রেথা থাভিসিন। অথচ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েও পার্লামেন্টের সেনা নিয়ন্ত্রিত উচ্চকক্ষের কারসাজিতে মুখ থুবড়ে পড়ে দেশটির গণমানুষের স্বপ্ন মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি। 

জান্তারা সরকারের সঙ্গে গণতন্ত্রের ভাগ বসানোর পর থেকেই ক্ষণে ক্ষণে দেশটির সংবিধানে আসে পরিবর্তন। ২০০৬ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর থাকসিন সিনাওয়াত্রার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১৯৯৭ সালের সংবিধান প্রত্যাহার করে। ২০১৬ সালে আরেকটি নতুন সংবিধান বাস্তবায়নে গণভোটের আয়োজন করে। সে বছরের ৭ আগস্ট থাইল্যান্ডের ৪০.৪ মিলিয়ন যোগ্য ভোটার ওই গণভোটে অংশ নেয়। নতুন সংবিধান প্রণয়নে ভোটারদের দুটি প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নগুলোকে হ্যাঁ অথবা না এই দুটি উপায়ে উত্তর দেওয়া যেত। প্রথম প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি খসড়া সংবিধান মেনে নেন? খসড়া সংবিধানের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় ছিল সরকারের উচ্চকক্ষে ২৫০টি আসনে জান্তাদের নিয়োগ। 

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের মধ্যে উচ্চকক্ষে সামরিকদের আসন সংখ্যা পাকাপোক্ত করার মানে পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচনে সামরিক-সমর্থিত প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিশ্চিত করা। এ ধরনের সিদ্ধান্তে একজন অনির্বাচিত সামরিক সমর্থিত প্রধানমন্ত্রীর জন্য দরজা খুলে যাবে। দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংসদের উচ্চকক্ষকে কি নিম্নকক্ষে যোগদানের অনুমতি মেনে নেওয়া উচিত? এই দুটি প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে সামরিক সমর্থিতরা নিজেদের বৈধ দাবি করবেন। অন্যদিকে গণভোটে ‘না’ আসলে সরাসরি শাসনক্ষমতা সরকারি দলের দিকে ঝুঁকে যাবে। সে বছর গণভোটে ৬১.৪ শতাংশ জনগণ ‘হ্যাঁ’ ভোটে নিজেদের সমর্থন জানায় এবং ‘না’ ভোটে সায় দেয় ৩৮.৬ শতাংশ মানুষ। সেনা সরকার জেনারেল প্রায়ুথ চান ওচার অধীনে অনুষ্ঠিত ওই ভোটাভুটির পরই একেবারে সরাসরি গণতন্ত্রে ভাগ বসায় সেনা সমর্থিত জোট ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডার’ (এনসিপিও)। সাংবিধানিক এই ইতিহাসকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন সংস্কারবাদী পিটা লিমজারোয়েনরাতের (৪২) দল ‘মুভ ফরওয়ার্ড পার্র্টি’। 

চলতি বছরের মে মাসে হওয়া নির্বাচনে মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি বিপুল ভোটে জয়ী হয়। বছরের পর বছর ধরে চলা সামরিক শাসনকে উৎখাত করতে ভোটাররা পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু দেশটির সাংবিধানিক আদালত প্রথমে পিটাকে (৪২) নাটকীয়ভাবে পার্লামেন্ট থেকে বরখাস্ত করে। নির্বাচনের জয়কে চূড়ান্ত পরিণতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে পার্লামেন্টের অনুমোদন দরকার ছিল পিটার। তবে সে তিনি ওই অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হন। প্রধানমন্ত্রী হতে তার পার্লামেন্টের দুই কক্ষের ৭৪৯ সদস্যের মধ্যে অন্তত ৩৭৫ ভোটর প্রয়োজন। তিনি পান ৩২৪। নিম্নকক্ষের নির্বাচিত এমপিদের মধ্যে তার সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও তিনি উচ্চকক্ষের সামরিক বাহিনী অর্থাৎ সিনেটরদের ভোট পাননি তিনি। প্রথমবার ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় দফায়ও ব্যর্থ হয় পিটা। আদালতে পিটিশন করার পর থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। এতে সরাসরি ফেউ থাই পার্টির পাল্লা ভারি হতে থাকে। সরকার গঠনের আশায় মুভ ফরওয়ার্ড পার্র্টির জোট ভেঙে নতুন করে ঘর বাঁধে রাজা ও সেনা সমর্থিত দলগুলোর সঙ্গে।  প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয় থাকসিনের ব্যবসায়ী পার্টনার স্রেথা থাভিসিনকে। সেনা মদদে নির্বাচিত এই প্রধানমন্ত্রীই এখন থাই গণতন্ত্রের অভিভাবক। ‘অভ্যুত্থানের দেশে’ সেনা ছাউনির ‘গণতন্ত্র’।