শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত ও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন। তাদের মধ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও শতাধিক নোবেল বিজয়ী আছেন। ড. ইউনূসের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও।
এরই ধারাবাহিকতায় ড. ইউনূসকে সমর্থন জানাতে তুরস্কের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) এক সদস্য সে দেশের সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। ড. ইউনূস ইস্যুতে গত মঙ্গলবার দিয়ারবাকির একেপির ২২তম দলের সদস্য প্রফেসর ড. আজিজ আকগিল তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বরাবর একটি চিঠি দেন।
ওই চিঠির একটি কপি তাকেও পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিটি তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও বুধবার প্রকাশ করেছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালের ১৮ জুলাই প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান তার্কিশ গ্রামীণ মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রাম (টিজিএমপি) প্রকল্প গ্রহণ করেন। এ প্রকল্পের আওতায় দিয়ারবাকির অঞ্চলে অসচ্ছল নারীদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হয়। এরপর থেকে এ প্রকল্পটি দেশের ৬৯ অঞ্চলে এবং ১০০টি শাখার মাধ্যমে ২০ বছর ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের এ প্রকল্পে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূস সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বব্যাপী দরিদ্রদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত।
টিজিএমপি প্রকল্পের আওতায় এখনও পর্যন্ত এক বিলিয়ন ৬০৬ মিলিয়ন তার্কিশ লিরা ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ঋণের আওতায় দেশের ২ লাখ ১০ হাজার হতদরিদ্র নারী সচ্ছল হয়েছেন। তুরস্কে জামানত, গ্যারান্টি বা কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া বিশ্বাসের ভিত্তিতে এ ঋণ দেওয়া হয়। দেশটিতে এ ঋণ আদায়ে সফলতার হার ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ। টিজিএমপির সামাজিক প্রভাব প্রতিবেদনের তথ্যমতে, তারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে এক লিরা ঋণ দেবেন। যার সামাজিক প্রভাব হবে সাড়ে ৪ তার্কিশ লিরার সমান।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে অন্যায্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের আইন ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ তিনি ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক উদ্যোক্তা উদ্যোগের মাধ্যমে দারিদ্র্য মোকাবিলায় তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি বর্তমান প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এটা পরিতাপের বিষয় যে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সারা জীবনের অর্জনগুলোর ব্যাপারে অন্যায় তদন্ত করা হচ্ছে।
ওই চিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিত্তিহীন অভিযোগ সম্বলিত চিঠি সংযুক্ত করা হয়েছে; যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ৭০ জন বিশ্বনেতা ও ১০৩ জন নোবেলবিজয়ীর স্বাক্ষর রয়েছে।
চিঠির শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্বোধন করে ড. ইউনূস ইস্যুতে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমর্থনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।