সৌদি আরবের সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে শত শত অভিবাসী নিহত হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
প্রতিবেদনে ২০২২ সালের মার্চ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত ঘটা ২৮টি আলাদা ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে বিস্ফোরক অস্ত্র ব্যবহার এবং কাছ থেকে গুলি করার ১৪টি ঘটনা রয়েছে।
সোমবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সৌদি-ইয়েমেন সীমান্তে ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই ইথিওপিয়ার নাগরিক। তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেন হয়ে সৌদিতে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ওই সময় গুলিতে প্রাণ হারান তারা।
বিবিসিকে কয়েকজন অভিবাসী জানিয়েছেন, গুলিতে অনেকের অঙ্গহানিও হয়েছে। এছাড়া গুলিতে নিহতদের অনেকের মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছেন অভিবাসীরা।
‘তারা বৃষ্টির মতো আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে’-এই শিরোনামে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত প্রতিবেদনে কয়েকজন অভিবাসীর লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিবাসীরা বলেছেন, তাদের ওপর গুলি করা হয়েছে এবং বিস্ফোরক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে সৌদির পুলিশ ও সেনারা।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদনটির প্রধান প্রতিবেদক নাদিয়া হার্ডম্যান সোমবার বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা যে তথ্য লিপিবদ্ধ করেছি সেটি নিশ্চিতভাবে গণহত্যা। মানুষ যে চিত্রের কথা বলেছেন তাতে বোঝা যায় সেটি মৃত্যুপুরি ছিল। মানুষের মরদেহ পাহাড়ি এলাকায় যেখানে সেখানে পড়ে ছিল।’
নাদিয়া হার্ডম্যান জানিয়েছেন, যারা এই হামলা থেকে বেঁচে গেছেন তারা তাদের কাছে অনেক ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছেন। তাদের ধারণা, সৌদির সীমান্ত বাহিনীর হামলায় ৬৫৫ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু এ সংখ্যা শত শত হতে পারে।
এসব ঘটনা ঘটেছে ইয়েমেনের উঁচু-নিচু দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায়। বিবিসির সঙ্গে কয়েকজন অভিবাসী জানিয়েছেন, রাতের বেলা তারা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ওই সময় ইথিওপিয়ার অসংখ্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওপর নির্বিচারে গুলি ছোড়া হয়। যখন গুলি চালানো হয় তখন সেখানে নারী ও শিশুও ছিল। তারা মূলত তেলসমৃদ্ধ সৌদিতে কাজের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন।
মোস্তফা নামের ২১ বছর বয়সি এক অভিবাসী বিবিসিকে বলেছেন, ‘গুলি চলেছে আর চলেছে।’
তিনি জানিয়েছেন, গত বছরের জুলাইয়ে তিনি ও তার দলের সদস্যরা সৌদিতে প্রবেশের চেষ্টা চালান। তখন তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে শুধু তার দলেরই ৪৫ জন নিহত হন। এমনকি তিনিও গুলিবিদ্ধ হন।
তিনি বলেছেন, ‘আমি বুঝতেও পারিনি আমি গুলিবিদ্ধ হয়েছি। কিন্তু যখন আমি উঠে দাঁড়াই এবং হাঁটার চেষ্টা করি, আমার পায়ের অংশ আর তখন আমার সঙ্গে ছিল না।’ ইথিওপিয়া থেকে সৌদি আরবের সীমান্তে যেতে দীর্ঘ তিন মাসের এক কষ্টের যাত্রার মধ্যে দিয়ে যান তারা। এই তিন মাসের মধ্যে তাদের না খেয়ে থাকতে হয়েছে।
ইথিওপিয়ান ও ইয়েমেনি মানব পাচারকারীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তিন মাসের যাত্রাটি মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল সৌদির বাহিনীর গুলিতে। তবে অভিবাসীদের ওপর এ গণহত্যা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে সৌদি আরব।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সৌদি সীমান্তে এখনো হত্যার ঘটনা ঘটছে। আর যারা গুলিতে বা হামলায় নিহত হচ্ছেন তাদের কবর দেওয়া হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের শহর সাদায়। সেই কবরস্থানের পরিধি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।