তালেবান মেঘে ঢেকে গেছে আফগান গণমাধ্যমের তেজ। দিন গড়াচ্ছে আর আফগান আকাশ থেকে খসে পড়ছে সাংবাদিকতার সূর্য। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তালেবান শাসনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাংবাদিকরা। হুমকি-ধমকি-হয়রানিতে শিকারে পিষ্ট হয়ে বাধ্য হচ্ছেন হাল ছাড়তে। ছেড়ে দিচ্ছেন চাকরি।
অনেকেই জীবন বাঁচাতে দেশ ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। গত দুই বছরে দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সাংবাদিক তাদের পেশা ত্যাগ করেছেন। সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রাজধানী কাবুলে তালেবানের আগমনের দ্বিতীয় বার্ষিকীর সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করেন সংস্থার সদস্যরা। যারা তালেবান প্রশাসনের নিপীড়ন সত্ত্বেও দেশটির অভ্যন্তরে ও বিদেশে সাংবাদিকতাকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই করছেন। আফগানিস্তানের নাম-পরিচয়ে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, ‘আমি নারী হওয়ার কারণে বারবার ঘটনা প্রকাশ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
একজন নারী সাংবাদিক হিসাবে আমার কাজ নিয়ে বারবার ভাবতে হয়।’ কারণ, নারী সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে আসতে মুখ ঢাকতে হয়। এমনকি তারা পুরুষ সাংবাদিকদের সঙ্গে টকশোতে অংশ নিতে বা তাদের প্রশ্ন করতেও ভাবতে হয় বহুবার। এজন্য অনেকেই কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সংবাদ সংস্থার কক্ষে বন্দি বোধ করার পরিবর্তে বাড়িতে থাকার পথ বেছে নেন।
তালেবানের হিংস্র চাপে দেশটির ৮০ শতাংশ নারী সাংবাদিক কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হন। শুধু নারী নয়, পুরুষরাও আছে একই কাতারে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারাও। ২০২১ সালে দেশটির প্রায় ১২ হাজার সাংবাদিকের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি পেশা ত্যাগ করেছেন।
যাদের মধ্যে নারী ও পুরুষ উভয়ই ছিলেন। গত দুই বছরে মিডিয়া ধ্বংস হয়ে গেছে। আগস্টের শুরুতে আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশের শরিয়াহ আইনের অধীনে সম্প্রচারিত হামিশা বাহার টেলিভিশন ও রেডিও প্রাঙ্গণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আফগান ইনডিপেনডেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (এআইজেএ) অনুসারে, ২০২১ সালে নিবন্ধিত ৫৪৭টি মিডিয়া আউটলেটের অর্ধেকেরও বেশি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৫০টি টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে ৭০টিরও কম চালু আছে। ৩০৭টি রেডিও স্টেশনের মধ্যে মাত্র ১৭০টি থেকে সম্প্রচার কাজ করা হচ্ছে।
সংবাদ সংস্থার সংখ্যা ৩১ থেকে ১৮তে পৌঁছেছে। দেশটির উš§ুক্ত গণমাধ্যম সমর্থনকারী এনএআইয়ের পরিচালক জারিফ কিরিমি বলেন, পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে বাকি গণমাধ্যমগুলো শিগগিরই তাদের দরজা বন্ধ করতে বাধ্য হবে। আরএসএফ আফগানিস্তানে একটি নতুন স্বাধীন সাংবাদিকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করছে বলে জানা গেছে।
তবে তালেবানের অসহ্য জুলুমেও হাল ছাড়েননি অনেক সাংবাদিকই। প্রচারণার কাজ জারি রাখতে গড়ে তুলেছেন নিজেদের সংঘ। কানাডায় বসবাসরত আফগান বংশোদ্ভুত সাংবাদিক জাহারা নাদের বলেন, ‘তালেবানরা সমাজ থেকে বিশেষ করে গণমাধ্যম থেকে নারীদের মুছে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা তা হতে দেইনি।’ জান টাইমস নামের গণমাধ্যম চালু করেন নাদের।
এতে যুক্ত রয়েছেন মোট ১৫ জন। যাদের ৫ জন রিপোর্টার দেশের অভ্যন্তরে ও বাকিরা বাইরে থেকে কাজ করেন। নিজেদের নাম আড়াল রেখেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে জাকি দারিয়ারি পালিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকেই চালু করেন অনলাইন মাধ্যম ‘কাবুলনাউ’। এক সময়ের ভেঙে যাওয়া ইটিলাট্রোজ দলের অংশকে সংস্থা জোড়া লাগান আবারও।