ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে যা করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ১৯, ২০২৩

ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে যা করণীয়
প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, দিন দিন ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। ডেঙ্গুজ্বর চিকিৎসার আদ্যোপান্ত নিয়ে লিখেছেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের সিনিয়র সাইন্টিস্ট ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম

* ডেঙ্গুজ্বর কী

ডেঙ্গুজ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত এডিস নামক মশার কামড়ে। এটি প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে-ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার এবং ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের হয়ে থাকে। তাই ডেঙ্গুজ্বরও চার বার হতে পারে। যারা আগেও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।

* ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। অনেক সময় ব্যথা এত তীব্র হয় যে, মনে হয় বুঝি হাড় ভেঙে যাচ্ছে। তাই এ জ্বরের আরেক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’। জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র্যাশ, অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব, এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়। সাধারণত চার বা পাঁচ দিন জ্বর থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায় এবং কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এর দুই বা তিন দিন পর আবার জ্বর আসে। একে ‘বাই ফেজিক ফিভার’ বলে।

* হেমোরেজিক জ্বর

এ অবস্থাটাই সবচেয়ে জটিল। এ জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও যে সমস্যাগুলো হয় তা হলো-শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়, যেমন চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে ব্যথা ও রক্তপাত, মহিলাদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি। এ রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে ও পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জণ্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

* শক সিনড্রোম

ডেঙ্গুজ্বরের ভয়াবহ রূপ হল শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হলো-রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়, শরীরের হাত-পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

* কখন ডাক্তার দেখাবেন

ডেঙ্গুজ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এ জ্বর সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। নিম্নোক্ত সমস্যা হলে ডাক্তারের পারমর্শ নেওয়া শ্রেয়।

▶ শরীরের যে কোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে।

▶ প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।

▶ শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি এলে।

▶ প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।

▶ জণ্ডিস দেখা দিলে।

▶ অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।

▶ প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।

* কী কী পরীক্ষা করা উচিত

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুজ্বর হলে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার নেই। জ্বরের চার-পাঁচ দিন পরে সিবিসি এবং প্লেটলেট করাই যথেষ্ট। প্লেটলেট কাউন্ট ১ লক্ষের কম হলে, ডেঙ্গু ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ডেঙ্গু অ্যান্টিবডির পরীক্ষা পাঁচ বা ছয় দিনের পর করা যেতে পারে। এ পরীক্ষা রোগ শনাক্তকরণে সাহায্য করলেও রোগের চিকিৎসায় এর কোনো ভূমিকা নেই। প্রয়োজনে ব্লাড সুগার, লিভারের পরীক্ষাগুলো যেমন এসজিপিটি, এসজিওটি, এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি করা যাবে। এছাড়াও প্রয়োজনে পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম, বুকের এক্সরে ইত্যাদি করা যাবে। চিকিৎসক যদি মনে করেন, রোগী ডিআইসি জাতীয় জটিলতায় আক্রান্ত, সে ক্ষেত্রে প্রোথ্রোম্বিন টাইম, এপিটিটি, ডি-ডাইমার ইত্যাদি পরীক্ষা করতে পারেন।

* চিকিৎসা কী

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী সাধারণত পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়; এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়। ডেঙ্গুজ্বরটা আসলে একটা গোলমেলে রোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। খেতে না পারলে দরকার হলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ওষুধ কোনোক্রমেই খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে। জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে।

* কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়

ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এ মশা যেন কামড়াতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা। এডিস মশা সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে বের হতে হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

পরামর্শ- ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম