ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, জুলাই ৫, ২০২৪ |

EN

ড্রাগন চাষে সাড়া ফেলেছেন নারী উদ্যোক্তা চম্পা

কৃষি ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ১২, ২০২৩

ড্রাগন চাষে সাড়া ফেলেছেন নারী উদ্যোক্তা চম্পা
ড্রাগন চাষ করে সাড়া ফেলেছেন যশোরের নারী উদ্যোক্তা চম্পা বেগম। নানা বাধা উপেক্ষা করে তিনি সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের বানিয়ালী গ্রামে ২০ শতাংশ জমিতে জৈব পদ্ধতিতে করেছেন ড্রাগন ফলের বাগান। চলতি বছর সেই বাগানে ধরেছে গোলাপি রঙের মিষ্টি ড্রাগন ফল। বর্তমানে তার বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সেই সঙ্গে তাকে দেখে ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনেকে।

২০২২ সালের শুরুর কথা অসুস্থ স্বামী আর সন্তান নিয়ে কঠিন সময় যাচ্ছিল চম্পা বেগমের। বাড়িতে হাঁস-মুরগি আর গরু-ছাগল পালন করে কোনরকমে দিনপার করছিলেন তিনি। মাস ছয়েক পর জেসিএফ-এর ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন এ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের একটি উঠান বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা হওয়ার। ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলেন অর্গানিক ড্রাগন ফলের বাগান।

চম্পা বেগম জানান, পরিবার ও এলাকার মানুষের বিরোধিতা সত্ত্বেও শুরুতে ১০ শতাংশ জমিতে ৫১২টি ড্রাগন চারা রোপন করেন তিনি। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে কোনরকম রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই জৈব পদ্ধতিতে শুরু করেন বাগান পরিচর্যা। মাস ছয়েক পরেই ফল আসতে শুরু করে চম্পার বাগানে। বছর শেষে খরচ উঠে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন এই নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে ১ বিঘার পরিপূর্ণ অর্গানিক ড্রাগন বাগানের মালিক তিনি।

চম্পা বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আমি প্রথম কৃষি অফিস ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন এ্যাক্টিভিটি প্রকল্প ও ডিজিটাল ইনফরমেশন এর সহায়তায় ড্রাগন ফল চাষ শুরু করি এবং নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পাই। যা আমাকে একজন সফল নারী উউদ্যোক্তা  হিসাবে গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। আমি বর্তমানে মানুষকে নিরাপদ ও পুষ্টিকর ড্রাগন ফল খাওয়াতে পারছি। এটাই আমার তৃপ্তি। যখন আমি বাগান করি এলাকার লোক অনেকেই বলেছিলো- মহিলা মানুষ মাঠে-ঘাটে যাওয়া ঠিক না। কিন্তু আমি সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে প্রতিদিন দূরদুরান্ত থেকে লোকজন  আমার বাগান দেখতে আসে। আমার দেখাদেখি অনেকে এখন এই এলাকায় বাগান করছেন। বিশেষ করে মহিলারা বাগান করেছেন। এ জন্য আমি স্যারদের ধন্যবাদ দিই।’

একটি গাছ পরিপক্ব হতে এক-দুই বছর সময় লাগে। পরিপক্ব একটি গাছে ২৫ থেকে ৩০টি ড্রাগন ফল ধরে। প্রতিবছর জুন থেকে নভেম্বর এই ছয় মাস ফল পাওয়া যায়। প্রতি কেজি স্বাভাবিক ফলের বর্তমান বাজারমূল্য ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। কিন্তু অর্গানিক পদ্ধতির এই ফলের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

চম্পা বেগম আরও জানান, ১ লাখ টাকা পূঁজি নিয়ে বাগান শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার বাগানের ২০ শতাংশ জমিতে গোলাপি রঙের ড্রাগন ফল শোভা পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাগান করার খরচ উঠে গেছে। বাকি ফল বিক্রি করে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি। বাগান ঠিকঠাক পরিচর্যা করলে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া সম্ভব বলেও জানান চম্পা।

চম্পা বেগমের ড্রাগন বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনেকে। এদের মধ্যে বানিয়ালী গ্রামের ফুলিমা বেগম একজন। তিনি বলেন, ‘চম্পা আপা যদি পারে আমি কেন পারবো না। আপাকে দেখে আমিও ড্রাগনের চাষ শুরু করিছি। আমি ২০০ চারা রোপন করেছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবো।’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন (জেসিএফ)- এর ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন এ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের এরিয়া স্পেশালিস্ট আসাদুজ্জামান সুমন জানান, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিতে যশোর এবং খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় তাদের নানামুখী কর্যক্রম অব্যহত রয়েছে। এর মধ্যে যশোরে নিরাপদ ফল চাষ নিশ্চিতে ফলচাষীদের বিভিন্ন জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা করছেন তারা। এর মধ্যে কেঁচো কম্পোস্ট সার, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, মালচিং পদ্ধতি অন্যতম। যার ব্যবহার করা হয়েছে চম্পা বেগমের ড্রাগন বাগানে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আবু তালহা বলেন, ‘যশোরের মাটি ড্রাগন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এটি ক্যাকটাস জাতীয় মেক্সিকান একটি ফল। এই ফল বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী। এটা খুবই শৌখিন একটি ফসল; তাই দেশে এখনও বাণিজ্যিকভাবে ততটা সহজ হয়নি। আমাদের উপ-পরিচালক চম্পা বেগমের বাগান পরিদর্শন করেছেন। উনি একজন নারী হয়ে এই অঞ্চলে এই ফসল চাষ করে বিপ্লব ঘটিয়েছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। তার কোন সহযোগিতার দরকার হলে যশোরের কৃষি বিভাগ অবশ্যাই তার পাশে থাকবো।’