ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, জুলাই ৫, ২০২৪ |

EN

ইমরান খান সরকার উৎখাতে মার্কিন ষড়যন্ত্রের গোপন তারবার্তা ফাঁস

বিশ্ব বাংলা ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ১২, ২০২৩

ইমরান খান সরকার উৎখাতে মার্কিন ষড়যন্ত্রের গোপন তারবার্তা ফাঁস
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন মিশনের কথা ইথারে ভেসে বেড়ালেও তার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় কমই। এবার সেরকমই এক বোমা ফাটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্ট। সংবাদমাধ্যমটি বুধবার (৯ আগস্ট) তাদের ওয়েবসাইটে পাকিস্তানে গতবছর ইমরান খান সরকারকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে একটি ‘গোপন’ তারবার্তা প্রকাশ করেছে।

ইন্টারসেপ্ট তাদের ওয়েবসাইটে গত বছরের ৭ মার্চ ওয়াশিংটনে নিযুক্ত তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র মধ্যকার কথিত কথোপকথনের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।

তার বার্তা অনুযায়ী লু আসাদ মাজিদকে বলেন, ইউক্রেন নিয়ে পাকিস্তান ভয়াবহ রকমের নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে। এটা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ পছন্দ করছে না। প্রধানমন্ত্রীই (ইমরান খান) এককভাবে এই ধরনের আক্রমণাত্মক নিরপেক্ষ অবস্থানের জন্য দায়ী।

রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ লু’কে বোঝাতে চেষ্টা করেন, শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, ইউক্রেন নিয়ে পাকিস্তানের নিরপেক্ষ অবস্থান একটি সরকারি সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে বাকি মন্ত্রীদেরও সম্মতি রয়েছে। কিন্তু নিজের অবস্থানে অটল থেকে ইমরান খানকেই বারবার দোষ দিতে থাকেন লু। এক পর্যায়ে লু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান) অবস্থান সমস্যাজনক। তার বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনা হবে। এটা সফল হলে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের সব কিছু ক্ষমা করে দেবে ওয়াশিংটন। সংশ্লিষ্টদের পুরস্কৃত করা হবে।

অনাস্থা ভোটে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করা না গেলে পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত দুঃসময় অপেক্ষা করছে বলেও হুমকি দেন লু। ডোনাল্ড লু বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে একঘরে করার সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে ইউরোপ। 

সেসময় লু’র সঙ্গে আলাপের বিষয় নিয়ে ইমরান খানের কাছে একটি নোট পাঠান আসাদ মাজিদ। তাতে তিনি ইঙ্গিত দেন, ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকিটা সরাসরি হোয়াইট হাউস থেকেই আসছে। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।

ডোনাল্ড লু এবং রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদের মধ্যে কথিত বৈঠকের আগের দিন  ইমরান  খান  এক সমাবেশে  যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় আহ্বানের সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন,  ‘আমরা কি আপনাদের গোলাম? আমাদের সম্পর্কে কি মনে করেন? আমরা আপনার দাস এবং আপনি আমাদের কাছে যা চাইবেন আমরা তাই করবো? তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার বন্ধু এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রেরও বন্ধু। আমরা চীন ও ইউরোপের বন্ধু। আমরা কোনো জোটের অংশ নই।’

ফাঁস হওয়া বিস্তারিত নথিতে বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের এক মাস পর পাকিস্তানের পার্লামেন্টে একটি অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এই ভোটে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়। পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সমর্থনেই এই ভোট সংগঠিত হয়েছিলো বলেই ধারণা করা হয়। এর পর থেকে ইমরান খান এবং তার সমর্থকরা সামরিক এবং বেসামরিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে  লিপ্ত হয়। ইমরান  খান দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই তারা তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করেছে সেনাবাহিনী ও তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।

এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বুধবার (৯ আগস্ট) পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন,  ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত নিজেই বলেছেন, নেতৃত্ব ঠিক করার মতো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমরাও বলেছি, এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

অন্যদিকে, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বুধবার এক টুইট বার্তায় ওই প্রতিবেদন নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘এই গল্পে নতুন কিছু না থাকলেও এর সত্যতা ও নথিপত্রের উৎস সম্পর্কে জানতে তদন্ত দরকার।

পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) মুখপাত্র রউফ হাসান বলেন, ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অবস্থানকে সমর্থন করছে ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদন।

উল্লেখ্য, ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে ইমরানের বিরুদ্ধে ১৫০টিরও বেশি মামলা করা হয়েছে। ৫ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের একটি মামলায় তার তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এখন তিনি কারাগারে। 

রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রির অভিযোগে করা এই মামলা ‘তোশাখানা মামলা’ হিসেবে পরিচিত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধানকে এক লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। সূত্র: দ্য ইন্টারসেপ্ট, আরটি