পাহাড়ের আস্তানা থেকে পালিয়ে র্যাবের অফিসে গিয়ে সহায়তা চান ৪ তরুণ। ওই চারজন নিজেদের জামায়াতুল আনসারের পালিয়ে আসা সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। এরা পরিচিতজনের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দিয়েছিলেন বলে র্যাবকে জানান।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, মঙ্গলবার রাতে র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নে হাজির হয়ে ওই চারজন নিজেদের জামায়াতুল আনসারের পালিয়ে আসা সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। বিভিন্ন জেলা থেকে নিখোঁজ তরুণদের তালিকায় এই চারজনের নাম পাওয়ায় তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়।
নিখোঁজ ৫৫ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ছয়জন স্বেচ্ছায় ফিরে এসেছেন, আর ৪২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
বুধবার ঢাকায় র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে মঈন বলেন, অন্যের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে তারা ওই সংগঠনে যোগ দিলেও পাহাড়ে গিয়ে তাদের ‘ভুল ভাঙে’। এরপর তারা সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন কিন্তু মাঝে ধরা পড়ে নির্যাতনেরও শিকার হন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ফিরে আসা চার তরুণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। সে কারণে তাদের আদালতে পাঠানো হবে। এরপর র্যাব প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাদের আইনি সহায়তা করবে।
মঈন বলেন, ফিরে আসা ওই চারজনের মধ্যে ১৬ বছর বয়সি এক কিশোর আছে, সে নারায়ণগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছিল। ২০২১ সালে তার শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই সংগঠনে যোগ দেয়। পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১২ জনের দলের সঙ্গে তৃতীয় ব্যাচে পাহাড়ে যায়।
তাদের মধ্যে ২৬ বছর বয়সি এক তরুণ আছেন, যিনি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। ২০২১ সালে জামায়াতুল আনসারের শূরা সদস্য মায়মুনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই সংগঠনে যোগ দেন।
২৬ বছর বয়সি এক তরুণের মধ্যেমে সংগঠনে যোগ দেন ২৪ বছর বয়সি আরেক তরুণ, যিনি সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে পড়ছিলেন। ২০২১ সালে তিনি জামায়াতুল আনসারে যোগ দেন। ওই বছরের নভেম্বরে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে পাহাড়ে যান।
ফিরে আসা চতুর্থজন ২১ বছর বয়সি তরুণ, যিনি আগে মাদারীপুরে ঘড়ির মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। ২০২১ সালে সিরাজ নামে একজনের মাধ্যমে ওই সংগঠনে জড়ান। ওই বছরের নভেম্বরে পাহাড়ে চলে যান।
পাহাড়ে যাওয়ার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’-এর সহযোগিতায় সংগঠনটির সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম ও চিন্তাভাবনা দেখে তাদের ভুল ভাঙে। এই চারজনসহ বেশ কিছু সদস্য সমতলে ফিরতে চাইলেও প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িত সদস্যরা তাদের ফিরতে দেয়নি।
পালিয়ে আসা চারজন ২০২২ সালের জুনেও একবার পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান র্যাবের মুখপাত্র।
র্যাব কমান্ডার মঈন বলেন, এ বছরের মার্চ মাসে পাহাড়ে র্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা পালানোর পথ খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে তারা অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পালিয়ে যান। মার্চ মাসের প্রথমদিকে তারা সমতলে চলে আসেন। এরপর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকেন।
তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিবারের পক্ষ থেকে র্যাবের কাছে যেতে বলা হয়।
এর আগে নয়জন নারী জঙ্গিবাদ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন বলে জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মঈন।