বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে ‘মিথ্যা ও সাজানো’ মামলায় সাজা আওয়ামী সরকারের ফরমায়েশি রায়ের আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো বলে মনে করে বিএনপি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঢাকা মহানগর বিশেষ দায়রা জজ আদালতে তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়াটা আওয়ামী দুঃশাসনের কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে কারো মনে হয়নি। বিচার বিভাগের দলীয়করণের এটা আরেকটি নিকৃষ্ট নজির। সরকারপ্রধান নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চান। সেজন্য আইন আদালত ও প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। এই ফরমায়েশি রায় দেওয়ার ঘটনা দেশকে গণতন্ত্রশূন্য করার ধারাবাহিক চক্রান্তের অংশ।
বুধবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় অবিলম্বে ‘মিথ্যা’ মামলায় তাদের সাজা প্রত্যাহারের আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই রায় যে শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে, তার বড় প্রমাণ আদালতে প্রায় ৪৯ লাখ মামলার জট থাকলেও আলোরগতিতে চলেছে এ মামলার কার্যক্রম। রাত ৮টা ৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাজানো সাক্ষীকে দিয়ে শেখানো বুলি বলানো হয়েছে আদালতে। এক মাসে এ মামলার জন্য প্রতিদিন শুনানি করে ৪২ জন সাক্ষী দ্রুতগতিতে নিজেরা নিজেরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। বহু আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা হিমাগারে ফেলে রেখে দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এ সাজানো মিথ্যা মামলার কার্যক্রম ১ মাস ২০ দিনে শেষ করা ও আদেশ দেওয়ার মানে হলো জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে নির্মূল করা। প্রধানমন্ত্রী হিংসার প্রয়োগে দ্বিধা করেননি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আইনজীবীরা এ ধরনের অস্বাভাবিক বিচার কার্যের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গেলে তাদের ওপর পুলিশ ও সরকারদলীয় আইনজীবীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। তাদের আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। গোটা দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করেছে কিভাবে তামাশার বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল চালানো হয়েছে। আজকের ফরমায়েশি রায় সরকারপ্রধানের হিংসা ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশজুড়েই যখন আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে- তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণের মধ্যে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে বিভ্রান্ত করতে অবৈধ আওয়ামী সরকারের এটি একটি কূটচাল। একদফার চলমান আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রতিহিংসা মেটানো হয়েছে। যেমনটি করেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়ে। দেশের জনগণ বিচারের নামে এ প্রহসন, এই ফরমায়েশি রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডা. জোবাইদা রহমান দেশের একজন খ্যাতনামা মেধাবী চিকিৎসক। তিনি শুধুমাত্র সাবেক রাষ্টপতি এবং স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান বীরোত্তম এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধু এবং তারেক রহমানের স্ত্রী হওয়ার কারণেই আজকে সম্পূর্ণ চক্রান্তমূলক, অন্যায় এবং বেআইনিভাবে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি তার ট্যাক্স রিটার্নে ৩৫ লাখ টাকার ঘোষণা করা সত্ত্বেও তা আমলে না নিয়ে নিয়ন্ত্রিত আদালত সরকারের ফরমায়েশি রায় দেওয়া হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ডা. জোবাইদা রহমান একদিকে যেমন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ, অন্যদিকে তিনিও দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী বর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তান। মেধাবী চিকিৎসক জোবাইদা রহমান পড়ালেখা করেছেন সেরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তার পিতা মরহুম মাহবুব আলী খান বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান। সুতরাং তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলার রায় জনগণ মানে না। এসব করে বিএনপির চলমান আন্দোলন দমন করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী, আপনি হিংসার পথে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের মজলুম নেতা তারেক রহমানকে নতজানু করতে পারবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা অব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. অব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।