আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যেসব বিদেশি বন্ধুরা আমাদের পরামর্শ দেন, তাদেরকে বলেছি- সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমরা ওয়াদাবদ্ধ।কিন্তু সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের প্রধান বাধা.. প্রথমে দেখা গেল আজকে সেই বিএনপি, যাদের বিরুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের বলেছিলাম- সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান বাধা বিএনপি, সেটি আজ প্রমাণিত।
শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সভা শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে সভা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং কেন্দ্রীয় নেতারা।
রোববারের বিক্ষোভ কর্মসূচির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামীকাল (রোববার) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সব থানায় বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হবে। যে যেভাবে পারেন, সারা দেশে সব মহানগর, জেলায়, থানায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্য সংগঠনগুলোকে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালন নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা দেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস আমরা রুখবোই। এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে, এটা আজকে আমাদের শপথ।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাি সত্য হলো। আমরা বারবার বলেছি- তাদের (বিএনপি) আন্দোলনের এক দফা অগ্নিসন্ত্রাস। তারা এটা শুরু করত গতকাল (শুক্রবার)। কিন্তু আমাদের শক্ত অবস্থানের কারণে তারা সেটি করতে পারেনি।’
এ সময় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শুক্রবারের শান্তি সমাবেশের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গতকাল (শুক্রবার) চেতনার অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, যে নব জাগরণ হয়েছে গতকাল, রেকর্ড তারুণ্যের উপস্থিতির জোয়ার দেশবাসী দেখেছে। আমাদের নেত্রীও (শেখ হাসিনা) তারুণ্যের নবজাগরণের ঢেউ প্রত্যক্ষ করেছেন, তারুণ্যের যে শক্তি প্রদর্শিত হয়েছে, তাতে আমাদের নেতাও (শেখ হাসিনা) খুশি হয়েছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
বিএনপির শুক্রবারের মহাসমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, গতকাল তারা বলেছে- এই রাজধানীর সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেবে। এটাই তাদের সিদ্ধান্ত। এর আগে তারা নেতাকর্মীদের অতিরিক্ত জামাকাপড় নিয়ে ঢাকা আসতে বলেছে এবং সঙ্গে চাদর নিয়েও আসতে বলেছে। তার মানে এখানে তারা অবস্থান করবে। গণভবন থেকে শেখ হাসিনাকে না হটিয়ে এ অবস্থান থেকে সরবে না। এটাই তাদের লিডার তারেক রহমানের নির্দেশ ছিল।
বিএনপির মহাসমাবেশে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অডিও বার্তা দেওয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি বুঝি না- আদালতের আদেশ প্রতিনিয়ত এই দুর্বৃত্ত তারেক রহমান লঙ্ঘন করে চলেছে। আদালতের আদেশ ছিল, কোনোভাবেই, কোনো ফোরামে তার ভাষণ, স্টেটমেন্ট, বিবৃতি ও বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। সে প্রতিনিয়ত হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্টকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। লঙ্ঘন করলে কী শাস্তি? শাস্তি তো তার ২০ বছর হয়েছে। আদালত যে বলেছে সে বক্তব্য, বিবৃতি দিতে পারবে না। কালকে (শুক্রবার) তো এমনও বলেছে- একটা লাশ পড়লে দশটা লাশ পড়বে। লাশ ছাড়া সে কথা বলে না। টাকা ছাড়া সে কথা বলে না। আন্দোলন করো টাকার অভাব হবে না। কোথা থেকে পায় এত টাকা। প্রকাশ্যে মুখে মুখে বলে এর কি বিচার নেই, প্রতিকার নেই! সে কি আইনের ঊর্ধ্বে? বিএনপির যে নেতারা পল্টনে দাঁড়িয়ে তার কথার প্রতিধ্বনি করে, তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে?’
একই দিনে কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা বলে- আমরা তাদের দেখাদেখি পালটা কর্মসূচি দিই। আজকে তারা এখনো কর্মসূচি দেয়নি। আমরা আজ বসেছি... আমাদের কর্মসূচি বিএনপিকে দেখে করব না। আমরা গতকাল (শুক্রবার) এক কিলোমিটারের মধ্যে সমাবেশ করেছি। কিন্তু ছোট একটা সহিংসতাও হয়নি। এই শহরে একই দিনে চারটা মিটিং হয়েছে। কোনো সংঘাত হয়নি। কারণ আমরা সংঘাত করতে সভা-সমাবেশ করিনি। সংঘাতের বিরুদ্ধে, সংঘর্ষের বিরুদ্ধে জনগণের জানমালের নিরাপত্তাকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করেছি। সেই জন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে ছিলাম, আছি, থাকব। কোনো পালটাপালটির বিষয় না।
আজকের সারাদিনের ঘটনা মনিটরিং করার কথা জানিয়ে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস তারা (বিএনপি) শুরু করে দিয়েছে। মাতুয়াইল, গাবতলীসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ৭টি বাসে আগুন দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে, হামলা করেছে। পুলিশের ওপর হামলা করেছে। যুবলীগের একজনের হাতের কবজি কেটে নিয়েছে।
তিনি দাবি করেন, অধিকাংশ সংঘর্ষ পুলিশের সঙ্গে হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর হামলা করেছে, ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়েছে। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস আবারো শুরু হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালের মতো নির্মম, নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, শেখ হাসিনার কর্মী বাহিনী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি চুপ করে থাকতে পারে না। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করব।
বিএনপি তাদের ওপর হামলা হওয়ার দাবি করছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা বলে- তাদের ওপর হামলা হচ্ছে, বাধা দেওয়া হচ্ছে। তারা বলেছে- ঢাকার শহরে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দেবে। এটা কি তারেক রহমানের বাপ-দাদার সম্পত্তি! লন্ডন থেকে আদেশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে, এটা কোন রাজনীতি!’
জরুরি সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া জরুরি সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামশ পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী, সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সরোয়ার ডেইজি, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসীফ ইনান উপস্থিত ছিলেন।