বিশ্বব্যাপী চলছে তীব্র দাবদাহ। প্রচণ্ড গরমে বেহাল দশা ইউরোপ, আমেরিকাসহ এশিয়ার অনেক দেশের নাগরিকদের।
একই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের ফিনিক্স শহরে। গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে শহরটির তাপমাত্রা ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফিনিক্সে এই দাবদাহ মোকাবিলার ক্ষেত্রেও দেখা যায় বৈষম্য।
প্রচণ্ড গরমে শহররটিতে ধনীরা থাকেন এসিতে। অন্যদিকে বাস্তুচ্যুত গৃহহীন, গরিবরা পুড়ছেন রাস্তায়।
ফিনিক্সের বাসিন্দা মেলানিয়া ফ্লয়েড (৩২)। বিশ্বব্যাপী চলমান আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।
তিনি তার বাড়ি সব সময় ৭৫ থেকে ৭৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২৩ এবং ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রাখেন বলেন জানান। আর এই পরিবেশে তিনি নির্বিঘ্নে তার দুই বছর ও ছয় বছর বয়সি বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে পারেন। তার বাচ্চারাও পড়াশোনা ও ঘরোয়া খেলাধুলা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারে বলেন জানান তিনি।
মেলানিয়া বলেন, ‘হাইড্রেটেড থাকা, ছায়ায় ও ঠান্ডায় অবস্থান করা, অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা আর যতদিন আমাদের এসি আছে ততদিন এটি সহনীয়।’
আবহাওয়ার এই চরমভাবাপন্নতা ফ্লয়েডের কাছে কোনো বড় বিষয় নয়। মরুভূমির এই শহরের অনেকেই তাপের ক্রমবর্ধমাণ বৃদ্ধি সম্পর্কে একই মতামত প্রকাশ করেছে। অফিস থেকে রেস্তোরাঁ অথবা দোকান, সব জায়গাতেই তাদের এয়ারকন্ডিশনার। এমনকি কোথাও গাড়ি রেখে যাওয়ার সময় তার ইঞ্জিন চালু রেখেই যাওয়ার ব্যাপারে তারা দুবার ভাবেন না। ফিরে এসেও এটিকে শীতল অবস্থায় দেখার জন্যই গাড়ি সচল রাখেন তারা।
অন্যদিকে একই শহরে পুরো উলটো চিত্র গরিব বাসিন্দাদের। তুলনামূলক কম ধনী এলাকায় গরম যেন নরকের মত। ফিনিক্সের কেন্দ্রস্থলে গৃহহীনদের একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা চার্লস স্যান্ডার্স (৫৯) ও কেভিন হেন্ডারশট (৪৭) । তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে বালতি অথবা ঝুড়িতে করে নিয়ে যাওয়া বরফই তাদের একমাত্র ভরসা। একই পরিস্থিতি শহরের অন্যান্য গরিব বাসিন্দাদের।
ফিনিক্সের একটি মোবাইল হোম পার্কে বসবাসকারী পাঁচ সন্তানের জননী রোজালিয়া লিসিয়া (৩৭)। মেক্সিকো থেকে আসা এই লিসিয়া পরিবারের খরচ মেটাতে বেশ কয়েকটি কম বেতনের চাকরি করেন। চলতি তাপপ্রবাহের প্রথমদিকে তার এয়ারকন্ডিশনার ভেঙে যায় বলে জানান তিনি।
দাবদাহ থেকে বাঁচতে দুদিন পুরো পরিবারকে তার বড় সন্তানের ঘরে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। কারণ তার বড় সন্তানের ঘরে একটিমাত্র উইন্ডো এসি ইউনিট ছিল। লিসিয়া বলেন, ‘এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে অনেকেই এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না।’
নতুন একটি এসি সিস্টেম কিনতে লিসিয়ার খরচ হবে ২ হাজার ইউএস ডলার। কিন্তু নতুন এসি কেনার সামর্থ্য তার নেই। তাই এটি মেরামতের মাধ্যমে একটি অস্থায়ী সমাধান খোঁজে নিয়েছেন। ভাঙা এসি ঠিক করতে হলে তার পড়বে ৮০০ ইউএস ডলার। অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে ও বাচ্চাদের কথা ভেবে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। লিসিয়া তার নিজ শহর আর কিছু ইউটিলিটি কোম্পানি দ্বারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইউনিটগুলোকে আপগ্রেড করারও চেষ্টা করেছিল।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ২০২২ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, মোবাইল হোমগুলো মেরিকোপা কাউন্টির সব আবাসনের পাঁচ শতাংশ। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ফিনিক্সসহ তার শহরতলী। শহরের ৩০ শতাংশ মৃত্যু অভ্যন্তরীণ তাপজনিত কারণে হয়েছে বলে জানায় তারা।