আন্দোলনের সূতিকাগারখ্যাত ঢাকার রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় বিএনপি। তাই ঢাকাকে টার্গেট করেই চূড়ান্ত করা হয়েছে সরকার পদত্যাগের কর্মসূচি। দলটির নেতারা মনে করেন, বিগত আন্দোলনে মহানগরের ব্যর্থতায় ক্ষমতাসীন দলের দখলে ছিল রাজধানী। তাই চূড়ান্ত সফলতা পাওয়া যায়নি। তাই এবার ঢাকাকে দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে সেই লক্ষ্যে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
সারা দেশে কর্মসূচি না দিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের রাজধানীতে আনার সিদ্ধান্ত হয়। মহানগর নেতাকর্র্র্মীদের সঙ্গে রাজপথে থেকে আন্দোলনে ভূমিকা রাখবেন তারা। দেড় মাস ধরে সব সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দশ সাংগঠনিক বিভাগ ধরে এ বৈঠক হয়। রংপুর বিভাগ থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ বিভাগ দিয়ে শুক্রবার যা শেষ হয়। এতে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপের পাশাপাশি আন্দোলন সফলে করণীয় নিয়েও জেলার নেতাদের পরামর্শ নেন হাইকমান্ড। শুরুর দিকে নেতাদের বক্তব্যের সুযোগ দিলেও শেষের চার বৈঠকে শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বক্তব্য দেন। এতে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন সফল করার বিষয়ে সহযোগিতা চান। বৈঠকে জেলা নেতারা বলেন, যত বাধাই আসুক, প্রত্যেক জেলা থেকে হাজারো নেতাকর্মী রাজধানীতে থাকবেন। মহাসমাবেশে অংশ নিতে দু-একদিন আগেই রাজধানীতে পৌঁছানোর বিষয়টিও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানান নেতারা।
সূত্রমতে, সমাবেশ সফলে জেলা শাখার পাশাপাশি সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়েও নয়াপল্টনের কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলের হাইকমান্ড। এছাড়াও ঢাকা মহানগরের নেতারা থানা-ওয়ার্ড নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছেন। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে স্ব স্ব জেলা শাখার বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে মহাসমাবেশে যোগ দিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বিভাগের ১১টি সাংগঠনিক জেলা শাখার নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি।
ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা বিভাগের সব জেলাসহ সারা দেশের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষ মহাসমাবেশে অংশ নেবেন। এজন্য যা যা করার, সেসব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি, পুলিশ নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেবে না। কারণ, আমরা ন্যায়সংগত অধিকারের পক্ষে রাস্তায় নেমেছি। ন্যায়সংগত অধিকারের পক্ষে পুলিশসহ সব প্রশাসন থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
সূত্রমতে, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৮২ সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই ইতোমধ্যে রাজধানীতে অবস্থান করছেন। তারা নিজ নিজ জেলার উপজেলা, পৌর, ওয়ার্ডসহ সব পর্যায়ের ইউনিটে প্রস্তুতি সভা শেষ করে নেতাকর্মীদের নিয়ে এসেছেন। কাউকে হোটেলে অবস্থান করতে কেন্দ্র থেকে নিষেধ করা হয়েছে। বরিশালের উজিরপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান (খান সোহাগ) যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশনায়ক তারেক রহমানের ডাকে আমরা মহাসমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় পৌঁছেছি। আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। আমার মতো কয়েক হাজার নেতাকর্মী বরিশাল থেকে ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছে।’
মানিকগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাাদক এসএ জিন্নাহ কবির যুগান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যে সব উপজেলার প্রস্তুতি সভা শেষ হয়েছে। এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী মহাসমাবেশে অংশ নেবেন। সেক্ষত্রে হেটে হলেও বুধবারের (আজ) মধ্যে ১৫ হাজারের অধিক নেতাকর্মী রাজধানীতে পৌঁছাবেন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘গণমানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ভ্যান গার্ডের ভূমিকা পালন করছে। আমাদের অসংখ্য সহযোদ্ধা গুম-খুন-হত্যার শিকার হয়েছেন। তারপরও মৃত্যুর উপত্যকায় দাঁড়িয়ে আমরা মুক্তির স্লোগান দিই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি আদর্শিক আন্দোলনে রয়েছি। সুতরাং মহাসমাবেশে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠতম ইতিহাস সৃষ্টি করবে ছাত্রদল। সেই প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’