সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে গোপনে জুডো শিখছেন আফগান নারীরা। প্রশিক্ষকের দায়িত্বে আছেন কুদসিয়া খলিলি (২২)। লড়াকু এই নারী জুডো খেলোয়াড় আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে বর্তমানে নরওয়েতে আছেন। রাজধানী অসলোর মার্শাল আর্ট ট্রেনিং সেন্টার থেকেই এ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তিনি। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আফগানিস্তানের আরেক নারী- দেশটির নারী জুডো দলের সাবেক কোচ ফরহাদ হয়রতি। কোচ ৫ হাজার মাইলেরও বেশি দূরে থাকলেও হোয়াটসঅ্যাপে ঘরে বসেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গোপনে প্রশিক্ষণ নিতে থাকা নারীরা ট্রেনিংয়ের সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে নেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে না আসার জন্য সীমিত সংখ্যক নারীদের নিয়েই চালানো হয় এ প্রশিক্ষণ। খবর আলজাজিরা।
২০২১ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বন্ধ নারীদের সব শিক্ষাকার্যক্রম। তাদের অন্যতম আয়ের উৎস বিউটি পার্লারেও তালা ঝুলিয়ে দেয়। একইসঙ্গে পার্ক, জিম, খেলাধুলাসহ সব ধরনের জনসমাগম থেকে নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়। বেগতিক এ অবস্থার আন্দাজ আগেই করতে পেরেছিলেন মেধাবী ক্রীড়াবিদ কুদসিয়া খলিলি।
এছাড়াও আফগানিস্তানের নারী খেলোয়াড়দের মধ্যে পরিচিত হওয়ায় তালেবানদের বাঁকা নজরেও ছিলেন তিনি। আফগানরা ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পরই ছয়জন সশস্ত্র লোককে তার বাড়িতে পাঠায়। সেদিন রাতের অন্ধকারে কোনোরকম নিজভূমি ছেড়ে পালাতে সক্ষম হয় খলিলি। বহু চড়াই-উতরাই পার করে নরওয়েজিয়ান জুডো ফেডারেশনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ উজবেকস্তানে পৌঁছান। সেখানে তিনি সঙ্গী হিসেবে পান ফারহাদ হয়রতিকে। সাত মাস তারা তাসকন্দে, আটমাস ইস্তানবুল ও তুর্কিতে কাটান তারা। এ সময়ের মধ্যে তারা দেশগুলোর বিশেষ জুডো সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। ডিসেম্বর ২০২২ থেকে এই দুই জুডো অনুরাগী নরওয়েতে পাড়ি জমান। এখন সেখান থেকেই নিজ দেশের নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ১৫ বছর বয়সি এক কিশোরী জানান, ‘প্রতিদিনই তালেবানরা আমাদের নারীদের জীবনকে সীমাবদ্ধ করে তুলছে। এতে আমাদের জীবনের লক্ষ্য অর্জন করা খুব কঠিন হয়ে গিয়েছে। যেসব নারীরা এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। এ প্রশিক্ষণ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। প্রতিবার যখন ট্রেনিং সেশনে যোগ দেই মনে নতুন করে আশা জাগে।’