বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ভিরু এবং কাপুরুষের দল। তাই তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে ভয় পায়। তিনি বলেন, সরকার বিদেশীদের বলছেন আমরা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিবো, অথচ নির্বাচনে আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দিয়ে নির্বাচনী মাঠ খালি করছেন। এই চক্রান্ত মানুষ সহ্য করবে না।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে ঢাকা বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে সরকার পতনের একদফা দাবিতে আগামী ২৭ জুলাই রাজধানীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল। সমাবেশের শুরুতে নেতাদের চাপে ভেঙে পড়ে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ মঞ্চ। তবে বড় ধরণের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন মঞ্চে থাকা নেতাকর্মীরা।
সমাবেশকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশেপাশের এলাকার লোকারণ্য হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে এর বিস্তৃতি ঘটে শাহবাগ, পল্টন, কাকরাইল পর্যন্ত।
দুপুরে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল শুক্রবার রাত থেকে ঢাকার আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। আজ ভোর থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ একদিকে স্যাংশন দিচ্ছে গণতন্ত্রকামী রাষ্ট্রগুলো। অপরদিকে তারা অন্যায় অবিচার অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনকে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে রাতারাতি পাল্টিয়ে ফেলা হচ্ছে ডিসি এবং এসপিদের। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্বস্তদের দিয়ে সাজানো হচ্ছে প্রশাসন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার অন্যায়ভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় বসে আছে। সরকার বড় বলে কথা বলছেন তারা নাকি ক্ষমতায় আসলে গণতন্ত্র আসে, জনগণের অধিকার ফিরে পায়, দেশবাসী দেখেছে ২০১৪ কিভাবে অনির্বাচিতদের দ্বারা সংসদ নির্বাচিত হয়েছিল। ১৮ সালে দিনের ভোট রাতে কিভাবে হয়েছিল। এই আওয়ামী লীগ সরকার আদালতে ঘাড়ে বন্দুক রেখে রাতারাতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার কথা বাতিল করেছে।
তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়ী হতে পারবে না, তারা তারা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে, যা আগে কোন সরকার করেনি। এরা দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কাম করেছে। এরা গণতন্ত্র বিরোধী স্বাধীনতা বিরোধী।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিলেন আমাদেরকে মাফ করে দেন। দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াবো, ঘরে ঘরে চাকরি দিব। আজ কি ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়া হয়েছে? মানুষ কি দশ টাকা দরে চাল পাচ্ছে? পাচ্ছে না। চাকরি তারাই পাচ্ছে, যারা আওয়ামী লীগ করে। অথবা ২০ লাখ টাকার ঘুষের বিনিময়ে আর চাকরি হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভালো ভোটের আলামত দেখতে পেলাম ঢাকা ১৭ আসনে। বেচারা হিরো আলমকে কিভাবে মারধর করা হলো। হিরো আলম বাচ্চা ছেলে, খুব কষ্ট পেলাম। আওয়ামী লীগ তাকেও ভোট করতে দেয়নি। এরা কাউকে সহ্য করতে পারে না। এরা দেশটা মনে করে বাপের তালুকদারী। এরা সাধারণ মানুষের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করছে, দেশটাকে ফোকলা বানিয়ে ফেলেছে। বিদ্যুৎ নেই। শুধু বিদ্যুৎখাত থেকেই ১৪ লক্ষ কোটি টাকা তারা লুট করেছে। এখন আর কোন বক্তব্য নেই, দাবি আদায়ের পালা।
তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তা শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলনও বলেছেন এই সরকার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়।
মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি নেতা রফিকুল আলম মজনু, সাইফুল ইসলাম নিরব, শেখ রবিউল আলম রবি, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ইউসুফ বিন জলিল কালু, এস,এম,জাহাঙ্গীর, মিয়া নূরুদ্দিন অপু, গোলাম মাওলা শাহীন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জয়নাল হোসেনসহ কারাবন্দী সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবী করেন।
সমাবেশে আমান উল্লাহ আমান বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলন শুরু হয়েছে। এদেশে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটায়ে জনগণের শাসন ফিরিয়ে আনা হবে। আর কোনো প্রতিবাদ নয়, এখন থেকে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
আব্দু সালাম বলেন, বর্তমান সরকার ভুয়া সরকার। এরা অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। জেল-জুলুম এখন আমরা আর ভয় পাই না। জনগণ শপথ নিয়েছে এই জালিম শাহী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না।
যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু'র সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির সহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খান প্রমুখ। সমাবেশ যৌথভাবে পরিচালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।