বিএনপির এক দফার আন্দোলনের মিত্রদের মতোই একাধিক ফ্রন্ট গঠন করবে আওয়ামী লীগ। এসব ফ্রন্ট গঠন করা হবে সরকার সমর্থক ছোট ছোট রাজনৈতিক দলকে নিয়ে। সমমনা এই রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপি ও তাদের মিত্রদের মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে রাজপথে এবং তারাও ক্ষমতাসীনদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবে।
বুধবার ১৪ দলের বৈঠকে এমন মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বৈঠকে আমির হোসেন আমু নতুন দুটি রাজনৈতিক দলকে ১৪ দলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করলে জোট শরিকরা এর বিরোধিতা করেন। তারা চান, ১৪ দলকে অটুট রেখে আলাদা আলাদা একাধিক ফ্রন্ট। পরে প্রধানমন্ত্রী ওই মত দেন।
বুধবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মহাজোটের আদলে নির্বাচনি জোট গঠনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে ১৪ দলীয় জোট আগের মতোই থাকবে। ১৬ মাস পর জোট নেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র ধারাবাহিক আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়ে জোট নেতাদের বিস্তারিত অবহিত করেন।
তিনি আন্তর্জাতিক এই চাপের কারণ হিসাবে বৃহৎ শক্তিগুলোর সামরিক ও অর্থনৈতিক চাওয়া-পাওয়ার বিষয় উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ভাগ চায়। এখন থেকে কোনো নির্দিষ্ট দেশের কাছ থেকে নয়, ব্যালেন্স (ভারসাম্য) করে সামরিক সরঞ্জাম কিনব। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে বলেন, অবশ্য যারা আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে তাদের কাছ থেকে এক টাকার জিনিসও কিনব না।
গণভবন সূত্র জানায়, ১৪ দলের এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা অক্টোবরের মধ্যেই নির্বাচনের আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে তারা বলেন, এবার ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সেই সব আসনে যাতে আগেই দলীয় মনোনয়ন না ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। সম্মতি জানিয়ে এ ব্যাপারে জোট নেতাদের আশ্বস্ত করেন শেখ হাসিনা।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বৈঠক শুরু হয়। শুরুতেই সূচনা বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং জোটের কয়েকজন নেতা বক্তৃতা করেন। তারা হলেন- ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, জেপির শেখ শহীদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির ডা. শাহাদাত হোসেন, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বাসার মাইজভান্ডারী, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, গণআজাদী লীগের এসকে শিকদার প্রমুখ। বিভক্ত গণতন্ত্রী পার্টির দুই অংশের দুই নেতাকে গণভবনের এ বৈঠকে ডাকা হয়। আরেক অংশের ছিলেন ব্যারিস্টার আরশ আলী।
রাশেদ খান মেনন সরকারের ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্বারোধ করেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে কথা বলেন। ইইউ প্রতিনিধি জামায়াত ও এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠক করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মেনন। সেই সঙ্গে তিনি জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি করেন।
হাসানুল হক ইনু দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। দুর্র্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকারের অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে বলেও জানান ইনু।
কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. অসিত বরণ রায় বলেন, জয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। এই স্লোগান দিয়েই মুক্তিযুদ্ধে করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের সবার জয় বাংলা স্লোগান ধারণ করতে হবে। এরপর বক্তব্য শেষ করেন তিনি। তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী রসিকতার সুরে বলেন, আপনি জয় বাংলা স্লোগান ধারণ করতে বললেন। কিন্তু নিজেই তো বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা বললেন না!
বৈঠকে ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন এবং হিরো আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়। ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সাবোটাজ করার চেষ্টা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারকে আরও সতর্ক হতে হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং বলেন, হিরো আলমকে ‘হিরো’ বানানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে।
বৈঠকে শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ১৪ দলকে শুধু কেন্দ্রে রাখলে চলবে না। তৃণমূল পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে হবে। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী তার বক্তৃতায় জামায়াত নিষিদ্ধ নিয়ে তার মামলার কথা তুলে ধরেন।
বৈঠক চলে রাত ৯টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত। পরে গণভবনে উৎপাদিত ধানের চাল দিয়ে রান্না করা পোলাও এবং ইলিশ মাছ, মুরগিসহ কয়েক পদের খাবার দিয়ে জোট নেতাদের আপ্যায়ন করা হয়।