প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসায় নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুসহ ৭ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় এ নৈশভোজে অংশ নেন তারা।
এর আগে দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে সাক্ষাত করেন উজরা জেয়া। তারও আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উজরা জেয়া সাক্ষাৎ করেন। এছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
দুপুরের পর উজরা জেয়া সাংবাদিকদের বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ঢাকার দৃঢ় অঙ্গীকার প্রত্যক্ষ করেছেন, যদিও ওয়াশিংটন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে সম্পৃক্ত নেই। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আমি (বাংলাদেশের) প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের সব মন্ত্রী, যাদের সাথে আজ আমার দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছে, তাদের কাছ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সমর্থনে দৃঢ় অঙ্গীকার শুনেছি।’
মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতির অংশ হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করে এবং ‘এটা সম্ভব করতে সাহায্য করার জন্য আমরা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখতে চাই।’ নির্বাচনী ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের পরামর্শ দেয় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে ওয়াশিংটনের কোনো ‘সরাসরি সম্পৃক্ততা’ নেই। নির্বাচনের সময়সূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া বাংলাদেশের ব্যাপার।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বুধবারের সমাবেশের বিষয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা সৌভাগ্যবশত গুরুতর সহিংসতামুক্ত বড় রাজনৈতিক সমাবেশ প্রত্যক্ষ করেছি এবং আমি মনে করি, আমরা যেমন দেখতে চাই- এটি তেমন সমাবেশের উত্তম সূচনা।
মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সাথে মার্কিন অংশীদারিত্বের গুরুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এখানে এসেছে উল্লেখ করে তিনি একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থনে সেই অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার জন্য ওয়াশিংটনের ইচ্ছার ওপর জোর দেন, যা হবে ‘আরও স্থিতিস্থাপক, আরও সংযুক্ত, অধিক নিরাপদ’।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা গঠনমূলক, ফলদায়ক এবং সম্পৃক্তিমূলক আলোচনা করেছি।’ তিনি জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা, প্রতিঘাত বা ভয়ভীতি ছাড়াই সাংবাদিকদের রিপোর্ট করার ক্ষমতা, মানব পাচার প্রতিরোধে সহযোগিতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সভা-সমিতিসহ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়াতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক সমাজ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এবং দেশের শাসনব্যবস্থায় বাংলাদেশীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর (বাংলাদেশের) একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ র্নির্ভর করে।’
আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাথে তার সম্পৃক্ততা আরও গভীর করার জন্য উন্মুখ।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, অবহিত ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে, যা বর্তমানে নেই। আন্ডার সেক্রেটারি প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী সচিব ডোনাল্ড লু এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।