Can't found in the image content. জুলাইয়ে নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশিদের তৎপরতা এবং চাপ বাড়ছে | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

জুলাইয়ে নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশিদের তৎপরতা এবং চাপ বাড়ছে

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: সোমবার, জুলাই ১০, ২০২৩

জুলাইয়ে নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশিদের তৎপরতা এবং চাপ বাড়ছে
বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশিদের তৎপরতা এবং চাপ বাড়ছে। তারা এখন সংকট নিরসনে একটি রাজনৈতিক সংলাপের চেষ্টা করছেন। আর এই তৎপরতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। তবে মার্কিন অবস্থানবিরোধী তৎপরতাও আছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য যেমন বিদেশি চাপ আছে, তেমনি এই চাপের ভেতরে-বাইরে ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকার ভূ-রাজনীতিও আছে। তারা মনে করছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য চাপ আরো বাড়বে। আর যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই সমাধানের পথে না যায় তাহলে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

তারা মনে করেন চলতি জুলাই মাস বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। কারণ নির্বাচনের আর বেশি বাকি নেই। ফলে এই মাসে বিদেশিরা তৎপরতা আরো বাড়িয়েছে। রোববার ঢাকায় আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের(ইইউ) নির্বাচনি অনুসন্ধান টিম। এবারের জাতীয় নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে কী না সে ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকা আসছে এই টিম।

২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি বাংলাদেশে।  প্রতিনিধি দল তাদের সফরে বাংলাদেশে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। এই সময়ে তারা রাজনৈতিক দল ছাড়াও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবে। জানা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ব্যাপারে কিছু নীতি অনুসরণ করে। তাদের বিবেচনায় তারা যদি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ না দেখে তাহলে সাধারণত তারা পর্যবেক্ষক পাঠায় না।

এদিকে আগামী ১১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু-ও থাকবেন এই দলে। চারদিনের সফরে এই প্রতিনিধিদল আসন্ন সংসদ নির্বাচন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা, শ্রম অধিকার, বাণিজ্য বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে। আর মাসের শেষে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অর্থনৈতিক পরিবেশ, জ্বালানি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হোসে ফার্নান্দেজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই সফরগুলোর মূল বিষয় হলো বাংলাদেশের নির্বাচন। তাদের ঢাকা সফরের আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা লক্ষ্যণীয়। তিনি আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করছেন বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে। বুধবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দুই দফা বৈঠক করেছেন।
জানা গেছে এইসব তৎপরতা আর যোগাযোগের পেছনে আছে রাজনৈতিক সংলাপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণার পর এখন সংলাপেই জোর দিচ্ছে বলে জানা গেছে।  বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ  এবং বিএনপিও আকারে ইঙ্গিতে সংলাপের কথা বলা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন বিএনপি নির্বাচনে এলে সংলাপ করবে তারা। আর বিএনপি বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিলে সংলাপ হতে পারে। বিদেশিরা একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে তাদের সংলাপে রাজি করানোর চেষ্টায় আছেন।

এদিকে ইইউর নির্বাচন অনুসন্ধান টিমের ঢাকা সফরের ঠিক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এক চিঠিতে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা সৃষ্টির জন্য সব অংশীজনকে ভূমিকা রাখতে হবে। আর সে জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপ এবং নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি স্লোভাকিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টিফেনেককে লেখা চিঠিতে এ কথা বলেছেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো, হুমায়ুন কবির বলেন,"  আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা যে কথা বলতে চাইছে তা অবজ্ঞা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বাংলাদেশের জন্য একটি সুষ্ঠু এবং অংশগ্রণমূলক নির্বাচন দরকার। এটা সবাই অনুভব করছেন। এটা সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুধাবন করতে হবে।”

তিনি বলছেন," মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই সুষ্ঠু ও অংশহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে। তারা রাজনৈতিক সংলাপ চায়। কিন্তু আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না চাইবো ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু হবে না। তবে বিদেশি চাপ বাড়তে থাকবে।  বিশেষ করে এই জুলাই মাসটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আর বেশি সময় নেই।”

"যদি রাজনৈতিক সমাধান না আসে তাহলে তা আমাদের জন্য হবে খুবই দুঃখজনক,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। তিনি বলেন," রাজপথে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে গেলে সংঘাত-সহিংসতা অনিবার্য। তাই আমাদের উচিত এখন রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে পথ বের করা। সবাইকে ছাড় দিতে হবে। অনঢ় অবস্থানে কোনো সমাধান আসবে না।”

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে বলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশিদের বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। তাদের অনেকের এখানে বিনিয়োগ আছে। অনেকের আরো অনেক হিসাব আছে। তাই তারা যার যার অবস্থান থেকে নিজেকে প্রকাশ করছে। এর সবটা যে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আমি তা মনে করি না।”

তার প্রশ্ন, ‘‘মার্কিন ভিসা নীতি কি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য বাড়িয়েছে, না বিভাজন আরো বাড়িয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর পেলেই অনেক কিছু বোঝা যাবে। এখানে লাখ লাখ লোক রাস্তায় না নামলে কোনো পরিবর্তন আসে না। বিদেশি তৎপরতায় অতীতে কিছু হয়েছে?  না হলেও নির্বাচন পর্যন্ত তাদের তৎপরতা আরো বাড়বে। কারণ তারা তাদের অবস্থান দেখতে চায়।”

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এক বিবৃতিতে বলেছে,"বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের লেখা কিছু চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়টি রাশিয়ার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটা হলো নব্য উপনিবেশ এবং একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরেকটি নগ্ন হস্তক্ষেপ।”