প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে তিস্তার পানি। এতে সিলেট ও রংপুরে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও দোয়ারাবাজারের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
রংপুরেও চরের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ফসলের খেত পানিতে ডুবে ফসলহানির আশঙ্কায় কৃষকরা। পানি বাড়ার ফলে গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন অনেকে।
রংপুর ব্যুরো ও কাউনিয়া : শনিবার দুপুর ১২টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৯৩ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার দশমিক ২২ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) নিচে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়েছে। ৪৪টি গেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৫ দিনে তিস্তার পানি পর্যায়ক্রমে বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। উজানে দোমুহুনি পয়েন্টে পানি সমতল স্থিতিশীল হওয়ায় তিস্তার পানি সমতল আগামী ১২ ঘণ্টায় হ্রাস পেতে পারে। তবে উজানে ভারি বৃষ্টি হলে পানি বাড়বে।
তিস্তায় পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা উপজেলাসহ কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, লালমনিরহাট সদর, হাতিবান্ধা, আদিতমারি, কালীগঞ্জসহ নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের নদী-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টার রিয়াদ মিয়া, আনোয়ার হোসেন ও চেনু মিয়া জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা আতঙ্কিত। ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সারা রাত জেগে কাটিয়েছি। জলকপাট খুলে দেওয়ায় পানি কিছুটা কমেছে।
কাউনিয়ার কৃষকরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরে দেরিতে চাষাবাদ করা বাদাম, মরিচ, ভুট্টা, পাটসহ আমন বীজতলা তলিয়ে গেছে।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার পানি বেড়েছে। আমরা সতর্ক আছি।
সিলেট: সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিফ আহমেদ জানান, সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে শনিবার বিকাল ৩টায় পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে। রেকর্ড করা হয় ১ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। বিপৎসীমা ছিল ১২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১১৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টাও ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
গোয়াইনঘাট (সিলেট): উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী সবকটি সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সারি গোয়াইনঘাট সড়কের লাফনাউট, কমপুর ও বেকরা এলাকা কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানিতে নিমজ্জিত। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। অনেকে গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, উপজেলার বন্যা পরিপস্থিতি অবনতি হচ্ছে। প্রশাসন তরফে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা রয়েছে।
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ): সুরমা, চেলা, মরা চেলা, চিলাই, চলতি, কালিউরি, খাসিয়ামারা ও ধুমখালীসহ উপজেলার সব নদী-নালা, হাওড়, খাল-বিলে পানি বেড়ে নিুাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। খাসিয়ামারা নদীর পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রসরাই-ক্যাপ্টেন হেলাল-খসরু উচ্চ বিদ্যালয় রাস্তার একাধিক স্থানে ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, ৪৮ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জসহ ভারতের চেরাপুঞ্জি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।