ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

পুরুষের চেয়ে বাড়ল নারীর গড় আয়ু

বিশেষ প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, জুন ১৪, ২০২৩

পুরুষের চেয়ে বাড়ল নারীর গড় আয়ু
দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ২০২২ সালে দেশে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু (অর্থাৎ আজ যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে তার গড় আয়ু হবে) ৭২ দশমিক ৪ বছর বা ৭২ বছর ৪ মাস ২৪ দিন। এর মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু ৭০ দশমিক ৮ বছর বা ৭০ বছর ৯ মাস ১৮ দিন। 

এ ছাড়া নারীর ৭৪ দশমিক ২ বছর বা ৭৪ বছর ২ মাস ১২ দিন। এ ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীদের গড় আয়ু বেড়েছে। ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর বা ৭২ বছর ৩ মাস ১৮ দিন। এদিকে উলটো চিত্র দেখা গেছে শিশুদের তথ্যে। 

দেশে সামগ্রিকভাবে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। তালাকের হারও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২-এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। মঙ্গলবার রাজধানীর পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে দেশে এক বছরের কম বয়সি শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২২ জন, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৫ জন। সেই সঙ্গে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর মৃত্যুহারও বেড়েছে। ২০২১ সালে যা ছিল প্রতি হাজারে ২৮ জন, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। এ ছাড়া গড় আয়ুর তথ্যে দেখা গেছে, ২০২০ সালে যা ছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর। ২০১৯ সালে গড় ছিল ৭২ দশমিক ৬ বছর। 

সেই হিসাবে ২০২২ সালে দেশের মানুষের গড় প্রত্যাশিত আয়ু ২০২১ ও ২২ অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। 

বিবিএস’র মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) পরিমল চন্দ্র বসুর সভাপতিত্বে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম (এসভিআরএস) প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন। বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দীপঙ্কর রায় এবং ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মাসুদ আলম। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরের ব্যবধানে তালাকের হার দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালে জাতীয়ভাবে তালাকের হার ছিল প্রতি হাজারে শূন্য দশমিক সাতজন। যেটি ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক চারজন। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে শূন্য দশমিক সাতজন তালাকের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে গ্রামে তালাকের হার ছিল শূন্য দশমিক আটজন। ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক চারজন। এ সময়ে শহরে তালাকের হার দাঁড়িয়েছে এক দশমিক একজন। যা ২০২১ সালে ছিল শূন্য পাঁচজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বিয়ের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে বিয়ের হার ছিল ১৩ দশমিক ৫ জন, যা বেড়ে ২০২২ সালে হয়েছে ১৮ দশমিক একজন। ২০২১ সালে গ্রামে বিয়ের হার ছিল ১৪ দশমিক ৭ জন, যা ২০২২ সালে হয়েছে ১৯ দশমিক ৫ জন। শহরে ২০২২ সালে বিয়ের হার ১৩ দশমিক ৮ জন, যা ২০২১ সালে ছিল ৯ দশমিক ৬ জন। তবে কমেছে মাতৃমৃত্যুর হার। ২০২১ সালে প্রতি লাখ জীবিত জন্ম শিশুর বিপরীতে মারা যেত ১৬৮ জন মা। ২০২২ সালে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ১৫৬ জনে। এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার কমেছে। ২০২১ সালে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ যে কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করত। সেটি ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশে। এদিকে বেড়েছে স্থূল প্রতিবন্ধিতার হার। ২০২২ সালের হিসাবে প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ২৫ দশমিক ৫ জন প্রতিবন্ধী পাওয়া গেছে। যেটি তার আগের বছরে ছিল ২৪ দশমিক ১ জন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৫। এটি ২০২১ সালের তুলনায় একটু বেড়েছে। এদিকে ধর্মের ক্ষেত্রে ২০২১ ও ২২ সালে মুসলিম এবং হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের লোকসংখ্যা একই রয়েছে। দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে ১৫ বছরের বেশি বয়সের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ, এটি ২০২১ সালে ছিল ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহার করে পাঁচ বছর বয়সের বেশি মানুষের মধ্যে ৪১ শতাংশ, যেটি ২০২১ সালে ছিল ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ। দেশে বিদ্যুতের (গ্রিড ও সৌর) আওতায় এসেছে ৯৯ দশমিক ১৬ শতাংশ পরিবার। সাত বছর ও তার বেশি জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া ১৫ বছর ও তার বেশি জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমরা অর্থনৈতিক সংকটে নেই, তবে চাপে আছি। সংকট হলে বৈশাখী ভাতা ও ঈদ বোনাস দেওয়া যেত না।
তবে হ্যাঁ, আমরা বারবার বলছি, অর্থনৈতিক চাপ আছে। আমরা এই চাপের কথা স্বীকারও করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার ইকোনমাইজ বা খরচ কমানোর কৌশল নিয়েছে। ঘরে চাল কমে গেলে মা যেমন বিভিন্ন কৌশল করে, তেমনিভাবে বর্তমান সরকারপ্রধান অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর কৌশল নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা সরকারপ্রধান ভালোই বোঝেন। সেটা বুঝেই এই বাজেটে কৌশল নেওয়া হয়েছে। আমি বলব, আপনারা আস্থা রাখুন। মন্ত্রীর মতে, প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু অর্থসম্পদের অপচয় হয়। কারণ, এখানে অনেক ফাঁকফোকর থাকে। দেশে ঢালাওভাবে কিছু হলেই একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এটা ঠিক নয়। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কর্মকর্তারা মনে করেন সরকারি কাজে থাকলে যে গাড়ি, যে টেবিল, যে ঘর থাকে, প্রকল্পে তার চেয়ে অনেক ভালো পাওয়া যায়। তাই এদিকেই কর্মকর্তাদের আগ্রহ থাকে। 

ড. শামসুল আলম বলেন, শিশুমৃত্যু হার বৃদ্ধি পাওয়া কাম্য নয়। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যে কারণে আরও সঠিকভাবে তথ্য উঠে আসছে। সে কারণে অতীতের হারের চেয়ে বেশি আসতে পারে। আমরা এ হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। তিনি আরও বলেন, করোনার সময় আমাদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে তার একটি চিত্র উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে। বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, গত বছর

আন্তর্জাতিক অভিবাসন অর্থাৎ দেশ থেকে চলে যাওয়ার হার দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে প্রতি হাজারে অন্য দেশে গিয়েছেন ৩ জন। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৬ জন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই আন্তর্জাতিক অভিবাসন প্রক্রিয়ায় দেশের অনেক মেধাবী লোকজনও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। পুঁজি বা অর্থ পাচার নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু মেধা পাচারের বিষয়টি আলোচনায় কম আসে। এভাবে যদি মেধাবীরা দেশ ছেড়ে চলে যায়, তাহলে জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ কীভাবে গড়ব? ভবিষ্যতে এটা দেশের জন্য ভয়াবহ ফলাফল দেবে।