ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪ |

EN

পর্যটকদের আর কত হয়রানির শিকার হতে হবে?

মতামত ডেস্ক | আপডেট: বুধবার, এপ্রিল ৫, ২০২৩

পর্যটকদের আর কত হয়রানির শিকার হতে হবে?
নদ-নদী, বিল-ঝিল,পাহাড় কিংবা সমুদ্র -প্রকৃতির সুন্দর সব সৃষ্টিতে যেন এক বিস্ময় ভূমিতে পরিনত হয়েছে চির সবুজের দেশ বাংলাদেশ। একদিকে পাহাড়ি ঝর্ণাধারা, অপরদিকে নদীমাতৃক বাংলাদেশের চিরায়ত গ্রামীণ রুপ- সবমিলিয়ে এক চিত্তাকর্ষক পরিবেশ বিরাজ করছে এখানে। 

পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, ঐতিহাসিক সব স্থাপনা-নগরী, নদী তীরের পর্যটন কেন্দ্র, পাহাড়ের আকাশ ছুঁইছুঁই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য- এসবের কারণে বহিঃ বিশ্বের পর্যটকমহলে রয়েছে বাংলাদেশের বেশ কদর। এক কথায় বলতে গেলে আমাদের দেশের প্রতি রয়েছে বিদেশিদের বিশেষ টান। তাই তো প্রতিবছর বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন প্রায় ২ লাখ বিদেশি পর্যটক। শুধু এখানকার প্রকৃতি-পরিবেশ নয় বাংলাদেশের মানুষেও মুগ্ধ বহিঃবিশ্ব। সাম্প্রতিক সময়ে প্রেমের টানে বহু বিদেশিনীর ছুটে আসার বিষয়টি তার প্রমাণ। 

স্বাভাবিক ভাবে বিদেশীদের কাছে আমাদের মান-মর্যাদার বিষয়টি দেশের জন্য গর্ব ও আনন্দের ব্যাপার। তবে দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের এই আনন্দ হয়তো আর বেশি দিন টিকবে না। তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, একের পর এক বিদেশি পর্যটক হয়রানি। ঋতুবৈচিত্রের এই দেশ ভ্রমনে এসে বিদেশিরা অর্জন করছে বিচিত্র ও তিক্ত সব অভিজ্ঞতা। খাবারের দাম বেশি রাখা, পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুন হাঁকা, ব্ল্যাকমেইলিং, লাজ-লজ্জা ছুড়ে ফেলে বিদেশী পর্যটকদের কাছে হাতপাতা, ধর্ষণসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের স্বাক্ষী বাংলাদেশ। এগুলো যেমন নৈতিকতা পরিপন্থী কাজ ঠিক তেমনই এসবের কারণে বিশ্ব দরবারে নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশ ভাবমূর্তি ও মান-মর্যাদা। বিশ্বে বাংলাদেশের মান-মর্যাদা আরো অনেক কারণে ক্ষুন্ন হলেও পর্যটকদের হয়রানির বিষয়টি সময় অনুযায়ী একটু বেশিই দিচ্ছে আলোচনার জন্ম। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার এই সময়ে রুটি-রুজির বিভিন্ন পথ হয়েছে উন্মুক্ত। তার মধ্যে একটি হলো- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক সাইট-অ্যাপে ব্লগিং কিংবা কন্টেন্ট ক্রিয়েটিং। এগুলোর মধ্যে একটি হলো, ভ্রমন ব্লগ বা ভ্রমণ কন্টেন্ট। 

মূলত ভ্রমণ কন্টেন্ট করে থাকেন বিদেশী পর্যটরা। অবশ্য আমাদের দেশেও রয়েছেন এমন অনেক ব্লগার। সেদিকে না যাই। সম্প্রতি বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন অস্ট্রেলিয় ব্লগার লুক ডামান্ত। বাংলাদেশের খাবার নিয়ে একটি ফুড ব্লগিং করতে গিয়ে আবদুল কালু নামের এক দোভাষী ব্যাক্তির দ্বারা হেনস্তার শিকার হন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর চলতি ২ এপ্রিল (২০২৩) কারওয়ান বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দু'শত টাকা জরিমানা নিয়ে তাকে ছেড়েও দেয়া হয়। 

অবশ্য পর্যটক হয়রানি ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টের পাশে থাকা ‘গুড ভাইব কটেজ’ নামের একটি রিসোর্টে অস্ট্রেলিয়ার এক নারী পর্যটককে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠলে সেই রিসোর্টের দুই কর্মচারীকে পুলিশ আটক করে। সেবার বিদেশি পর্যটক সেই নারী জাতীয় জরুরি সেবায় কল করে সাহায্য চান। এছাড়াও ২০০৫ সালে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে এক বিদেশি পর্যটক ধর্ষণের শিকার হন। সেই ঘটনায়ও ধর্ষককে গ্রেফতার হয়। পরিতাপের বিষয় হলো, এতোসব ঘটনার পরেও বন্ধ হয়নি এসব। তবে কবে নাগাদ বন্ধ হবে এটি- সেটিরও সদুত্তর নেই কারো কাছে। 

এতে করে যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে দেশের সম্মান ঠিক তেমনই বাংলাদেশের উপর থেকে আস্থা হারাচ্ছে বিদেশীরা। শুধু যে বিদেশি পর্যটকরা হয়রানির শিকার হন তা কিন্তু নয়। দেশীয় পর্যটকদের বেলায়ও রয়েছে নিরাপত্তা ঘাটতি। এক্ষেত্রে পর্যটক হয়রানি বন্ধে সকল পক্ষকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কাজ করতে হবে। সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতকল্পে বাড়াতে হবে টুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সক্ষমতা। তবেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মান-মর্যাদা বজায় থাকার পাশাপাশি বাড়বে সুনামও। এক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো সচেতন হতে হবে।