Can't found in the image content. বিশ্বাসহনন, অবহেলা ও প্রবঞ্চনার শিকার ১৭ জনের ঠিকানা কাপাসিয়া বৃদ্ধাশ্রম | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ |

EN

বিশ্বাসহনন, অবহেলা ও প্রবঞ্চনার শিকার ১৭ জনের ঠিকানা কাপাসিয়া বৃদ্ধাশ্রম

নরসিংদী প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, মার্চ ১৩, ২০২৩

বিশ্বাসহনন, অবহেলা ও প্রবঞ্চনার শিকার ১৭ জনের ঠিকানা কাপাসিয়া বৃদ্ধাশ্রম
সেলিম সাহেবের পড়াশোনা করেছেন ময়মনসিংহ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে।একজন অবসরপ্রাপ্ত  সরকারী কর্মকর্তা তিনি। বর্তমান ঠাঁই বৃদ্ধাশ্রমে। 
কল্পনা রানী- সরকারী হাই স্কুলের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। রুনু শিকদার-  চাটগাঁর মানুষ।পুত্রবধূর  অত্যাচারের মুখে ছেলে ফেলে রেখে গেছে এখানে। তারপর আর খোঁজ খবর নেননা কেউ তার। দেওয়ান কামরুজ্জামান বাবলু- পিডব্লিডির একজন প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদার ছিলেন। বাড়ী রাজধানীর গুলশানে। তাদের সবার ঠাঁই এখন 'আব্দুল আলী সেবাশ্রম' নামে কাপাসিয়ার নিভৃত গ্রাম বীরউজলির এ বৃদ্ধাশ্রমে।সমাজের উঁচু শ্রেনীর শিক্ষিত ও ধনাঢ্য এসব বৃদ্ধাশ্রমবাসীর একেকজনের গল্প একেকরকম। তবে বিশ্বাসঘাতকতা বঞ্চনা হতাশা ও পারিবারিক অবহেলার গল্পে মিল আছে সবারই।

সেলিম সাহেবের (৭৩) বাড়ী ময়মনসিংহ শহরে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা তার।বিসিএস ক্যাডারে প্রথম শ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তার চাকুরী দিয়ে পেশাগত জীবনের শুরু তার। পারিবারিক বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রবঞ্চনায় ভরা গল্প তার। শেষে মাস সাতেক আগে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে শৈশব বন্ধুর বৃদ্ধাশ্রমকে ঠিকানা বানিয়ে নেন তিনি। 

শামসুল হুদার (৬৪) বর্তমান  ঠিকানাও এ বৃদ্ধাশ্রম। আদী নিবাস ও পারিবারিক বিষয়ে মুখে কুলুপ আঁটা তার। এ প্রতিষ্ঠানে আছেন বছর তিনেক ধরে। তত্বাবধায়কের মতো করে বৃদ্ধাশ্রমের সব দেখভাল করেন তিনি। দেশের বাইরে ছিলেন অনেকদিন। অনেক টাকা পয়সাও কামিয়েছিলেন। শৈশবে পিতৃহারা শামসুল হুদা স্বজনদের হাতে মানুষ। আবার স্বজনদের হাতেই সব খুইয়েছেন তিনি। শেষে রিক্ত হাতে কাপাসিয়ার পল্লী বীরউজলি গ্রামের বৃদ্ধ নিবাসেই ঠাঁই তার। শরীর ভরা রোগব্যাধি নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের চেয়ারম্যান ও তার আত্মীয়দের বদান্যতায় টিকে আছেন এখানে। 

কল্পনা রানী (৬৮)পাকিস্তান আমলের গ্রাজুয়েট। চাকুরী ছিল তার সরকারী হাই স্কুল শিক্ষিকার। জীবনে বিয়েথা করেননি তিনি। পিতারএকমাত্র সন্তান। অবসরের পর সব সহায় সম্পদ বেহাত। এখন আছেন এ বৃদ্ধাশ্রমে। সম্পূর্ণ বধির তিনি। তাই আকারে ঈঙ্গিতে প্রশ্ন ছুঁড়তে নিজে থেকে সব বলে গেলেন তিনি। 

দেওয়ান কামরুজ্জামান বাবলু (৬৪) বৃদ্ধাশ্রমের টিনশেড বারান্দায় হাতাওয়ালা একটি চেয়ারে বসেছিলেন গেন্জী পরে। বাড়ি ঢাকার গুলশান এলাকায়। জানা গেলো, পিডব্লিউডির প্রথম শ্রেনীর একজন ঠিকাদার ছিলেন তিনি। বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি। পরিনতিতে একমাত্র ছেলেকে সব লিখে দিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন এখানে বছর খানেক ধরে। ব্রেন ষ্ট্রোক ঘটেছে । ফলে কথায় জড়তা বাবলুর। 

রুনু শিকদার (৭৪) এর বাড়ি চট্রগ্রামে। পুত্রবধূর অত্যাচারের মুখে বছর তিনেক আগে ছেলে তাকে এখানে ফেলে গিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট হয়েছেন। সেই থেকে এ বৃদ্ধাশ্রমে। তারপর থেকে একদিনের জন্যও খোঁজ নেননি তারা, না ফোনে না দেখা করে। এ জন্য বড়ো কষ্ট রুনু শিকদারের। 

এ রকম ১৭ জন বৃদ্ধ নানা প্রতারনা প্রবঞ্চনা ও নিদারুন অবহেলার গল্প নিয়ে নিজের স্থায়ী আবাস করে নিয়েছেন এ বৃদ্ধাশ্রমে। 

গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বীরউজলী নামক স্থানে ৫ বিঘে জমির উপর প্রাচীর ঘেরা ছায়া ঢাকা পাখী ডাকা বৃক্ষাদির প্রাচুর্যে ভরপুর ছিমছাম পরিচ্ছন্ন এবৃদ্ধাশ্রমটির প্রতিষ্ঠাতা প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক উপসচীব ড. শাহজাহান কবির। 

তিনি জানান,এ বৃদ্ধাশ্রম থেকে এর বর্তমান ১৭ জন বাসিন্দার ভরনপোষন চিকিৎসাসহসব রকমের ব্যয়নির্বাহ করা হচ্ছে। এছাড়া এখানে আছে একটি চিকিৎসা  কেন্দ্র। সপ্তাহের একদিন একজন এফআরসিএস ডাক্তার এখানে নিয়মিত বসছেন। রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধপত্র দেয়া হচ্ছে এখান থেকে। 

আছে এখানে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষন সেন্টার। প্রতি ব্যাচে নিখর্চায় এখানে ৯০ জন প্রশিক্ষনার্থী  প্রশিক্ষন নিয়ে থাকে। সবকিছু মিলিয়ে এর জন্য ভালো একটি অংক ব্যয় হয়ে থাকে শাহজাহান কবিরের।

তিনি জানান, প্রধানত তিনিই এর জোগানদাতা। তার পরিবারের অন্যরাও কমবেশী সহায়তা করে থাকেন এতে। এর সাথে সরকারী বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা যোগ হলে এটি পরিচালনার কাজ আরো অনেক সহজ হতো। 

শাহজাহান কবির আরো জানান,ধনাঢ্যদের যাকাত ও দান অনুদান এতে যোগ হলে আরো সহজ ও সাবলীলভাবে চালানো যেতো এর কার্যক্রম।