ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার আদানিকে ঘুষ দিয়ে আবারও ক্ষমতায় থাকতে চায় বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের মানুষ সোচ্চার হয়েছে, প্রতিবাদ করছে, আদানির সঙ্গে যে বিদ্যুৎ চুক্তি হয়েছে এটা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরোধী চুক্তি। আমরা প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে বলেছি, এ চুক্তি কোনো মতেই বাংলাদেশের পক্ষে যেতে পারে না। সেটা দেশের মানুষের ক্ষতি করবে। বিদেশে থেকেও প্রশ্ন করা হচ্ছে, কিভাবে বাংলাদেশের সরকার এ চুক্তি সই করল। চুক্তি করেছে এ জন্য, তার স্বার্থে। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। ঘুষ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
শনিবার (১১ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিদ্যুৎ, চাল, ডাল, তেল, কৃষি উপকরণ ও শিক্ষা উপকরণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং ‘বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন’ ও বেগম খালেদা জিয়ার ‘নিঃশর্ত মুক্তি’সহ ১০ দফা দাবি আদায়ের উদ্দেশে এ মানববন্ধন করবে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে, কতটা দুর্নীতি করেছে যে, ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে আদানির কাছ থেকে নেওয়া শুরু করেছে। এ দেশের মানুষকে উপেক্ষা করে, তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে পকেট কেটে নিজেদের রক্ষায় টাকার পাহাড় বানাতে চায়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু এ দেশের মানুষ সেটা আর কখনো হতে দেবে না।
আওয়ামী লীগের আবার খায়েস হয়েছে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সেই ব্লু-প্রিন্ট নিয়ে তারা ২৪ সালের নির্বাচন করতে চায়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের একই কায়দায়। কেন? তাদের আজীবন ক্ষমতায় থাকতে হবে। এ দেশটা হচ্ছে তাদের জমিদারি। আমরা সবাই প্রজা। প্রধানমন্ত্রী আজ আমাদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারের দুই-তিনজন মন্ত্রী কথা বলতে শুরু করেছে- বিএনপি ভয় পায়, নির্বাচন করবে। পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই- বিএনপি শেখ হাসিনার সরকার ও এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন করবে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা কোনো সংঘাতে যেতে চাই না। জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন মেনে নেন। ১০ দফা মেনে নেন। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। সংসদ ভেঙে দেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
বিএনপি শুরু থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে বলে উল্লেখ করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগের গাত্রদাহ হচ্ছে। উস্কানি দেওয়া চেষ্টা করছেন। বারবার উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন। জনগণ আন্দোলন শুরু করেছে, তারা জয়ী হয়ে ঘরে ফিরে যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। পঞ্চগড়ে সাম্প্রদায়িক হামলা সৃষ্টি করার সরকার সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। এ ঘটনার পরে এখন বিএনপির ১৮১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের দাবি ছিল বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া জনগণের কথা চিন্তা করে সেটা মেনে নিয়েছিলেন। তার অধীনে শান্তিপূর্ণভাবে ৪টি নির্বাচন হয়েছিল। আপনারা শুধুমাত্র অসৎ উদ্দেশে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এটাকে বাতিল করে দিয়ে এখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন। দেশের মানুষ তা মানবে না।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন, বাস, ট্রাক, রিকশাচালকসহ সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন তো শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যেতে চায় না নাকি তারা? সবাই বলবে, না। কারণ তাকে আমরা বিশ্বাস করি না। তার অধীনে এ দেশে কোনোদিন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
সরকার আবার নতুন করে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা ও ভয় দেখানো শুরু করেছে বলে দাবি করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, বিনা কারণে যুবদলের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করেছে তারা। মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার করে তারা দেশের মানুষকে স্তব্ধ করে রাখতে চায়। গত ১৫ বছর ধরে এ একই অস্ত্র তারা ব্যবহার করে চলেছে। কিন্তু তারা সেখানে সফল হতে পারেনি।
আওয়ামী লীগ দেশকে নরকে পরিণত করেছে বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিদেশী পত্রিকাগুলো বলছে, উন্নয়নের ফানুস দুর্নীতির কারণে চুপসে গেছে। কেমন দুর্নীতি? ভয়াবহ। দিনে-দুপুরে ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা ছিনতাই হয়ে গেছে। এটা সাজানো নাটক। এখন সবাই মিলে বলছে, না, না ৯ কোটি টাকা নয়, তিন কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় গেল? জবাব দেবে কে?
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রমুখ।