সিরিয়ায় আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সিরিয়ার আলেপ্পো বিমানবন্দরে ইসরায়েলি এই বিমান হামলা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এদিকে এই এই হামলার জেরে ওই বিমানবন্দরে ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা বহনকারী ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। বুধবার (৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, ইসরায়েলের ওই হামলায় ‘একজন সিরীয় কর্মকর্তা’ এবং অজ্ঞাত জাতীয়তার আরও দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার গভীর রাত ২টার দিকে এই হামলার ঘটনাটি ঘটে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি শত্রুরা লাতাকিয়ার পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর থেকে আলেপ্পো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, হামলার জেরে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির কারণে কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের সমস্ত ফ্লাইট বন্ধ করতে বাধ্য করেছে।
সিরিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সুলেমান খলিল এএফপিকে বলেছেন, গত মাসে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এলাকায় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আলেপ্পোতে এখন পর্যন্ত ৮০টিরও বেশি ত্রাণবাহী ফ্লাইট অবতরণ করেছে।
হামলার ফলে রানওয়ে বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষতি মেরামত না হওয়া পর্যন্ত এখানে আর কোনও ত্রাণবাহী ফ্লাইট অবতরণ করা সম্ভব নয়।’
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিবির্তিত পরিস্থিতিতে ত্রাণবাহী ফ্লাইটগুলোকে দামেস্ক এবং লাতাকিয়া বিমানবন্দরের দিকে পাঠানো হয়েছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সানা বলেছে, সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ‘শত্রু ক্ষেপণাস্ত্রের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
অবশ্য ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র আলেপ্পো বিমানবন্দরে এই হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, মেরামতের কাজ শেষ হলে কয়েকদিনের মধ্যে বিমানবন্দরটি আবার চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দামেস্কের একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এই দেশটির অভ্যন্তরে শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে। সরকারি নানা স্থাপনার পাশাপাশি মিত্র ইরান-সমর্থিত বাহিনী এবং হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েল অবশ্য খুব কমই সিরিয়ায় এই ধরনের অভিযানের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করে থাকে।
এছাড়া ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ায় তার সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়িয়েছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত বেশিরভাগ অঞ্চলেই তেহরানের উপস্থিতি রয়েছে। এমনকি ইরানের নেতৃত্বে হাজার হাজার মিলিশিয়া এবং স্থানীয় আধাসামরিক গোষ্ঠীর সদস্যরা সিরিয়ায় অবস্থান করছে বলে পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্রগুলো দাবি করছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার কখনোই প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি যে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ইরানি বাহিনী তার পক্ষে কাজ করছে। বরং আসাদ সরকার বলেছে, সিরিয়ার মাটিতে শুধুমাত্র তেহরানের সামরিক উপদেষ্টা রয়েছে।