সোস্যাল মিডিয়া | আপডেট: সোমবার, অক্টোবর ২৫, ২০২১
চলতি
মাসে ছয় ঘণ্টার জন্য বিভ্রাটের মধ্যে পড়েছিল ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর হোয়াটসঅ্যাপের
মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। শুধু এগুলোই নয়, এই রকম বিভ্রাটের মধ্যে প্রায়ই পড়ে
থাকে গুগল, অ্যামাজন, জিমেইল, ইউটিউব, গুগল ড্রাইভের মতো বড় বড় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও।
কিন্তু কেন এই বিভ্রাট?
ফেসবুকের মতো কয়েক মাস আগে বন্ধ হয়েছিল গুগলের সেবাও। শুধু তাই নয়, মাঝেমধ্যেই দেখা যায় অ্যামাজন বা মাইক্রোসফটের সার্ভার হোস্টিং সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। এতে বেশ কিছু ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা বন্ধ হয়ে পড়ে। ফেসবুকের পরপরই কাছাকাছি সমস্যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় হোস্টিংসেবা ওভিএইচ। প্রতিবার এই সেবাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অনুধাবন করেন, ঠিক কী পরিমাণ সেবা এই অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল।
ইন্টারনেটে সার্ভার ও পিসিগুলো একে অন্যকে খুঁজে পায় আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে। সেটি হতে পারে কয়েকটি সংখ্যা, যা ব্যবহৃত হয় আইপি সংস্করণ ৪ সিস্টেমে বা লম্বা একটি হেক্সাডেসিমাল কোড, যা ব্যবহৃত হয় আইপি সংস্করণ ৬-এর ক্ষেত্রে। একেকটি সেবার জন্য একাধিক সার্ভার ব্যবহৃত হতে পারে, একটি ব্যবহারকারী একাধিক পিসি থেকে একই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। ফলে সরাসরি আইপি অ্যাড্রেস ধরে যোগাযোগ করা হয়ে যায় বেশ কঠিন।
সেই সমস্যার সমাধানে তৈরি করা হয়েছে ‘ডাইনামিক নেম সার্ভার’ বা ‘ডিএনএস সেবা’। এই সেবাদানকারী সার্ভারে কোন আইপিতে কী কী সেবা পাওয়া যাবে, সেগুলোর ঠিকানা বড় বড় ডাটাবেইসে রক্ষিত থাকে। যখন ব্যবহারকারী ফেসবুক ডটকম তার ব্রাউজারে প্রবেশ করান, ডিএনএস সার্ভার সেই ওয়েবসাইট অ্যাড্রেসকে পরিণত করে ফেসবুকের আইপি অ্যাড্রেসে, আর পিসি বা ফোনের ব্রাউজার ডিএনএস থেকে প্রাপ্ত আইপি ঠিকানা অনুযায়ী যোগাযোগ করে থাকে।
গত কয়েক বছরে ‘ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস’ বা ‘ডিডিওএস’ হামলার প্রকোপ বেড়েছে। হামলার ধরনটি বেশ অদ্ভুত। সহজ করে বলা যায় সার্ভারকে বিপুল পরিমাণ ডিভাইসসেবা দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়, ফলে সার্ভারটির সেবা প্রদান হয় বাধাগ্রস্ত। ধরা যাক ফেসবুকের একটি সার্ভার ১০ লাখ ব্যবহারকারীকে সেবা দিতে পারে প্রতি সেকেন্ডে, কিন্তু হামলাকারী প্রতি সেকেন্ডে ২০ লাখ সংযোগের আবেদন পাঠাচ্ছে। সার্ভারটি তখন অতিরিক্ত লোডের ফলে করতে পারে ক্র্যাশ। ফলে সত্যিকার ব্যবহারকারীরা সেবা পাওয়া থেকে হন বঞ্চিত। এভাবেই সার্ভারকে জিম্মি করে হ্যাকাররা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে মুক্তিপণ আদায় করে থাকে।
সার্ভারের ঠিকানা যাতে হ্যাকারের হাতে না যায়, সে জন্য ডিএনএস সার্ভারগুলোতে বসানো হচ্ছে জটিল থেকে জটিলতর নিরাপত্তাব্যবস্থা, যাতে সত্যিকার ব্যবহারকারীদের ব্রাউজারই শুধু ওয়েব অ্যাড্রেস অনুযায়ী সেবাদানকারী সার্ভারে যুক্ত হতে পারে। সমস্যা হচ্ছে, প্রায় সময়ই দেখা যাচ্ছে উন্নত নিরাপত্তা বসাতে গিয়ে ডিএনএস সার্ভারে ওয়েব অ্যাড্রেস ও সার্ভারের আইপি অ্যাড্রেসের মধ্যকার সংযোগ মুছে যাচ্ছে বা হচ্ছে করাপ্ট। তাই ব্যবহারকারীদের সার্ভারের ঠিকানা দিতে পারছে না ডিএনএস সার্ভার।
এই সমস্যার ফলে ফেসবুকের সার্ভারে দীর্ঘ সময় সংযুক্ত হতে পারেননি ব্যবহারকারীরা। একই সমস্যার ফলে গুগলের সেবাও হয়েছে ব্যাহত, ওভিএইচের হোস্ট করা সেবাও হয়েছে বিঘ্নিত। ফেসবুকের সার্ভারগুলোর মাধ্যমেই কাজ করে হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম, এমনকি অকিউলাস সেবাও। ফলে একটি ডিএনএস বিভ্রাটের কারণে সব সেবাই হয়ে যায় অফলাইন। এদিকে গুগল ও ফেসবুকের মাধ্যমেই বিভিন্ন সেবায় লগইন করেন অনেক ব্যবহারকারী। ফলে সেসব সেবা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন তারা।